বগুড়ায় কিশোর নওফেল শেখ হত্যার রহস্য উন্মোচনসহ এক কিশোর ও তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৭ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বগুড়ায় আলোচিত কিশোর নওফেন শেখ হত্যা রহস্যের সমাধান করেছে পুলিশ। বান্ধবীর সঙ্গে হোটেল সময় কাটানোর জন্য নওফেনকে হত্যা করে তারই এক বন্ধু। এই ঘটনায় অভিযুক্ত এক কিশোর ও তরুণীকে আটকের পর এসব কথা জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার (২৮ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার কিশোরের বাড়ি বগুড়ার শাজাহানপুর হলেও সে ঢাকায় তার বড়ো ভাইয়ের সঙ্গে লন্ড্রির দোকানে কাজ করতো। আর তরুণীর বাড়ি বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়।
এই দুজনকে গ্রেপ্তারের পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত জানান বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে সময় কাটানোর জন্য দ্রুত টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে বন্ধুকে খুন করা হয়। পরে তার মোবাইল হাতিয়ে বিক্রি করে ওই বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে সময় কাটায় অভিযুক্ত কিশোর। এ ঘটনায় ওই তরুণীকেও (২০) গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
গেলো ২০ জুন সন্ধ্যায় বগুড়ার শাজাহানপুরের দাড়িগাছা ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে নওফেল শেখের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়। এর আগে ১৮ জুন থেকে সে নিখোঁজ ছিল। ১৪ বছরের নওফেল দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
সুদীপ জানান, মরদেহ উদ্ধারের পরপরই পুলিশ তদন্তে নামে। তদন্তে তার বন্ধুর সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসে। পরে ২৭ জুন দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন ছিলো। ওই দিন তার বাবা তাকে একটি দামি স্মার্টফোন উপহার দেন। সেই মোবাইল নিয়ে নওফেল ওই ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি জঙ্গলে যায়।
তিনি আরও জানান, এ সময় অভিযুক্ত কিশোর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মাফলার তার সঙ্গে নিয়েছিলো। জঙ্গলে এক ফাঁকে মাফলার গলায় প্যাঁচানো গল্প তুলে এই কিশোর। এরই এক পর্যায়ে নওফেলের গলায় মাফলার দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে পেছন থেকে টান দেয়।
এতে কিছুক্ষণ ছটফট করে নওফেল মারা যায়। পরে পাশে থাকা একটি বাঁশ দিয়ে মাথায় পরপর দুবার আঘাত করে অভিযুক্ত। মৃত্যু নিশ্চিত হলে সেখানে আরও প্রায় ১৫ হাত দূরে ঝোপের ভেতরে নওফেলের মরদেহ টেনে নিয়ে গিয়ে গুম করে।
পরে মরদেহটি উদ্ধার হলে ওই কিশোর সবার অগোচরে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত কিশোরের মোবাইল হাতানোর উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তার এক বান্ধবীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দ্রুত টাকা যোগাড় করতে না পারায় সে এই পথ বেছে নয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ বলেন, নওফেলের মোবাইলটি হাতিয়ে নিয়ে অভিযুক্ত কিশোর ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা করে। পরে তারা দুজনে শহরের সাতমাথায় একটি দোকানে গিয়ে ওই মোবাইল পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
বিক্রির টাকা নিয়ে তারা দুজনে শহরের গালাপট্টিস্থ হোটেল টুইন ব্রাদার্সে রুম ভাড়া করে সময় কাটায়। ওই কিশোরের আরেক বন্ধুও সেখানে এসে মেয়েটির সঙ্গে সময় কাটায়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেপ্তার কিশোরের দেখানো স্থান থেকে হত্যায় ব্যবহার সেই মাফলাটি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার তরুণী কারাগারে, আর অভিযুক্ত কিশোরকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.