চট্টগ্রাম

রাউজানে যৌতুক লোভী স্বামীর অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে স্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন

চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের, পশ্চিম গুজরা গ্রামের নুরুল আলমের বাড়ির বাসিন্দা, ছরোয়ার আলম নামক এক প্রবাসী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে পরিবারের সম্মতিতে দ্বিতীয় বিয়ে ও প্রথম স্ত্রীকে অন্যত্র ভাড়া বাসায় রেখে যৌতুকের দাবিতে অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে, এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন ভুক্তভোগী মৌসুমী ইসলাম (মৌ)।

১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ভুক্তভোগী মৌসুমী ইসলাম মৌ বলেন।

এক বিয়ে বাড়িতে ছরোয়ার আলমের সাথে পরিচয় সুত্রে মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান হয়। পরবর্তীতে ১২ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্যক্রমে স্থানীয় মসজিদে আমি মৌসুমি ইসলাম (মৌ) ও ছরোয়ার আলমের সাথে আকদ, বিবাহ সম্পন্ন হয়।

বিবাহের তিন মাস পর স্বামী ছারোয়ার আলম প্রবাসে চলে যায়। বিদেশ থেকে এসে কাবিন রেজিস্ট্রি করবে মর্মে বিদেশ যাওয়ার সময় যৌতুক হিসেবে ভিসার খরচ বাবদ আমার কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা নেয় এবং আমাকে বর্তমান স্থানে ভাড়া বাসায় রেখে যায়। কিছু দিন দোকানের কর্মচারী মাধ্যমে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠালেও পরে তা বন্ধ করে দেয়।

পুনরায় বিদেশে নতুন দোকান ক্রয়ের নামে যৌতুক হিসেবে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে। আমি আমার বড় বোনের নিকট হতে ধার কর্জ করে সেই দুই লক্ষ টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় তিন লক্ষ টাকা তার ছোট ভাই সাইফুল আলমের নিকট মোট পাঁচ লক্ষ টাকা বুঝিয়ে দিই। যার তথ্য প্রমাণ আমার নিকট সংরক্ষিত আছে।

Image

পরবর্তীতে বাংলাদেশে এসে আবারো যৌতুক বাবদ একটি মোটরসাইকেল দাবি করে বসে।  মোটরসাইকেল ক্রয় করে না দিলে বিবাহ রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এমত অবস্থায় আমি আমার পরিবারকে বলে (৩,২০,০০০, টাকায়, suziki sf) মোটর সাইকেল ক্রয় করে দিই। বিগত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন হয়।

পরবর্তীতে সাংসারিক জীবন চলমান অবস্থায় তিনি পুনরায় বিদেশ চলে যান। বিদেশ গিয়ে দোকানের পরিধি বাড়াতে হবে বলে পুনরায় যৌতুক হিসেবে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে বসেন। আমি নিরুপায় হয়ে বাপের বাড়ি থেকে পাওয়া নিজের শেষ সম্বল থাকার জায়গাটি বিক্রি করে সুখের আশায় তার হাতে দুই লক্ষ টাকা তুলে দিই।

একপর্যায়ে স্বামী ছরোয়ার আলম আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে, আমি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি ২০২৩ সালে সে গোপনে আরও দুইবার দেশে এসেছে।  পরিবারে ইচ্ছায় দ্বিতীয় বিয়ে করে, যা সে গোপন রাখে।

আমি বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, এক পর্যায়ে সে আমার ফোন রিসিভ করলে, তাকে দেখা করতে বলি। সে দেখা করতে অনীহা প্রকাশ করলে আমি তার পরিবারের নিকট সব বিষয় নিয়ে হাজির হব বললে, সে রাতে দেখা করে এবং এক পর্যায়ে দ্বিতীয় বিয়ের কথা স্বীকার করে। সে বলে থাকে ১০ লক্ষ টাকা দিলে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে আমার সাথে সংসার করবে। এতে আমার পরিবার সরাসরি টাকা না দেয়ার কথা বলে।

তার পরিবার, আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে আসতে বললে, পরবর্তীতে তার ছোট ভাই সাইফুল আলম ও বোনের স্বামী কিবরিয়া কে নিয়ে আসে। তারা আমার পরিবারকে আশ্বস্ত করে যে পরের দিন সকালবেলা আমার শাশুড়ি ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে এসে সামাজিকভাবে বিষয়টি সমাধান করবেন। 

Image

তারপর আমার স্বামী রাতের বেলায় ১০ লক্ষ টাকা যৌতুকের জন্য আমার চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। সকালবেলা পালানোর উদ্দেশ্যে খুবই হিংস্রভাবে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে কাঠের বাটাম দিয়ে আমাকে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে যার চিহ্ন জখম আমার শরীর এখনো বিদ্যমান।

অমানবিক নির্যাতন পরবর্তী সে আমাকে হুমকি দেয় আমি যদি থানায় বা কোর্টে মামলা করি তাহলে আমাকেও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে মেরে গুম করে ফেলবে। 

আমাকে মারধরের এক পর্যায়ে চিৎকার শুনে বাড়ির মালিক ও আমার বোন আত্মীয়-স্বজনরা এগিয়ে এসে থাকে আটকালে, সে আমাকে সিঁড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।

এই বিষয়ে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আমার শ্বশুর বাড়ি তালুকদার ভবনে গেলে ছারোয়ার আলমের মা, বোন ও বোনের স্বামী তার কার্যকলাপের জন্য এক দিনের সময় চেয়ে আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঐ রাতেই ভাড়া বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এমত অবস্থায় আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ পথে থাকলে আমি তাৎক্ষণিক হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা নিই।

পরবর্তীতে আমার পরিবার নিয়ে রাউজান থানা দিন নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পশ্চিম গুজরা গ্রামের নুর আলমের নিজ বাড়িতে গিয়ে ছারোয়ার আলমের পরিবারের কাউকে না পেয়ে, নোয়াপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। চেয়ারম্যান আমার শ্বশুর বাড়ির পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের জন্য সময় নেন। 

আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে আমি পুনরায় ১২ জুলাই শুক্রবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ভর্তি হই। পরবর্তীতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলে, ঐ দিন রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ছারোয়ার আলমের ছোট ভাই ও বোনের স্বামীর উপস্থিতিতে আমাকে ডেকে কাবিন নামা যাচাই বাছাইয়ের কথা বলে সময় নেয়। এতে আমরা পুনরায় চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করলে আবারো চার দিন সময় নেয়।

বর্তমানে আমি সুন্দর সামাজিক ভাবে শান্তিতে ছারোয়ারের সাথে সংসার করতে, তার পরিবার ও সমাজের কাছে সমাধান চেয়েও ব্যর্থ হয়েছি। তায় জাতির বিবেক সাংবাদিক সমাজের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এসময় সাংবাদিক সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগীর বড় বোন শাহিনুর বেগম ও বড় বোনের স্বামী মো: বেলাল হোসেন।

Author

মোহাম্মদ ইসমাইল (ইমন), স্টাফ রিপোর্টার

পেশায় একজন সাংবাদিক। তিনি ৩০ মে থেকে মিশন ৯০ নিউজে চট্টগ্রাম বিভাগীয় এলাকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে, সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker