শেরপুর

রাস্তার বেহাল দশায় ভোগান্তিতে ১৫ গ্রামের মানুষ

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ও শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের দড়িমুকুন্দ, রাজবাড়ী, হাতিগারা, বাঘমারা, ঘোলাগাড়ী, হাতিগাড়া, খোট্টাপাড়া, কাদিমুকন্দ, পেংড়া পাড়া, বীরগ্রাম, ভাদাইশপাড়া, খাসপাড়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের ৯ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে অর্ধ লাক্ষাধিক মানুষ। ইউনিয়ন দুটির সিমান্তবর্তী রাস্তাটি হওয়ায় নেই কোন সংস্কার কাজ। প্রতিনিয়তই এই রাস্তা দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনসহ হাজার হাজার গ্রামবাসী চলাচল করে। ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভটভটি, ট্রলিসহ নানা ধরনের ছোটোখাটো যানবাহন নিয়মিত চলাচল করতো। মাটির রাস্তা হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটি ড্রেনে পরিনত হয়ে প্রায় সম্পূর্ণ রাস্তা কর্দমাক্ত হয়েছে। কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। একমাত্র পায়ে হেঁটে ছাড়া তাদের আর চলাচলের কোন পথ নেই।
কৃষি পণ্য বহনতো দুরের কথা। অনেক সময় রাস্তা ছেড়ে জমির আইল দিয়ে যাতায়ত করতে হয় গ্রামবাসীর। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ১৫টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রলির মধ্যে কয়েকটি খাদ্যের বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার মাঝে কাঁদাতে ট্রলটি আটকে গেছে। সেখানে ৪/৫জন ট্রলিটি তোলার চেষ্টা করছে। কথা হয় ট্রলিচালক ইমাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, এই বর্ষার পুরো মৌসুমে ট্রলি বা কোন যানবাহনে কৃষিপন্য বা কোন মালামাল বহন করা যায় না। যদি ৩ থেকে ৪ দিন রোদ হয়। তাহলে সামান্য কিছু মালামাল বহন করা সম্ভব হয়। তবুও খুব কষ্ট করে নিয়ে যায়। কিছু যায়গায় মাথায় করে বস্তা পার করে আবার ট্রলিতে লোড দিয়ে নিয়ে যায়।
শ্রীকান্ত মাহাতো, রুস্তম আলী, ইমান হোসেন, ওসমান আলী, তছির উদ্দিন, ইয়াছিন আলীসহ আরো অনেক এলাকাবাসী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প গ্রামাঞ্চলে পাকা রাস্তা করণ হলেও এই রাস্তা সংস্কার বা পাকাকরণ হয়নি। আদিবাসী অধ্যুশিত এলাকা হওয়ার কারণে আজও এখানে ডিজিটাল উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বর্ষা মৌসুমে কৃষি পণ্য বাজারজাত করা সম্ভব হয় না যার ফলে পিছিয়ে পরছে এলাকার জীবন মান উন্নয়ন।
একজন অসুস্থ্য হলে বা গর্ভধারিনি মা’র প্রসবের ব্যাথা উঠলে ক্লিনিক বা হাসপালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। খোট্টাপাড়া এলাকার জয়নাল জানান, আমাদের এলাকার রোগীদের হেঁটে নিয়ে যেতে হয়। যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। কারণ রাস্তা বেহাল অবস্থার জন্য গাড়ী চলাচল করতে পারেনা। গ্রামে মরা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। এই এলাকায় রয়েছে বাঘমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কানাইকান্দর উচ্চ বিদ্যালয় যেখানে ছাত্ররা সময়মত বিদ্যালয়ে যেতে পারে না যদিও করোনার সময় স্কুল বন্ধ রয়েছে।
স্কুল ছাত্র লাবিব ও কলেজ ছাত্র আমিনুল জানান, এখন বৃষ্টির মৌসুম। সামন্য বৃষ্টি হলেই আর প্রাইভেট, কলেজ বা স্কুলে যাওয়া যায়না। কারণ এই রাস্তা দিয়ে গাড়ী চলাচল করেনা। পায়ে হেঁটে যেতে নিলে কাঁদা কাপড় ও শরীরে লাগে। অনেক সময় এই কাঁদার মধ্যে পা পিছলে পড়ে যায়। রাজবাড়ী গ্রামের খোদা বক্স, ইউনুছ আলী, আব্দুল কুদ্দুসসহ আরও অনেকে বলেন, আমরা পুরোপুরি অসহায়, এ রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে তা শুরু হচ্ছে না।
এ ছাড়া অল্প বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কোনো গাড়ি চলা তো দূরে থাক হেঁটে যাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। জানিনা ঠিক কতদিন আমাদের মানুষদের এ ভোগান্তি সহ্য করতে হবে। রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত ভাবে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মন্টু বলেন, রাস্তাটি ২টি ইউনিয়নের সিমান্তবর্তী। তার পরও রাস্তাটির বেহাল অবস্থা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে খুব্র দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার করা হবে। শাহবন্দেগী ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন বলেন, খুব শিগগিরই রাস্তাটির কাজ হবে বলে আশ্বস্ত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ময়নুল ইসলাম জানান, আমাকে লিখিতভাবে এলাকাবাসী অবহিত করেছে উপজেলা পরিষদ থেকে যুতকুটু সম্ভব খুব দ্রুতই রাস্তাটির সংস্কার কাজ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker