ইতিহাস ও ঐতিহ্যকিশোরগঞ্জ

গ্রামে আইসক্রিম বিক্রি করে দৈনিক আয় দেড় হাজার টাকা

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের গড় মাছুয়া এলাকায় দেখা মিলল ছলিম (৩৬) এর সাথে। তার চোখেঁ মুখে লেগে আছে মৃদু হাসিযুক্ত ছাপ। তার বাড়ী হোসেনপুরস্থ ধুলিহর। তার সাথে কথা বলে জানতে পারি-

“পরিবারের বেহেরে লইয়া অহন ভালায় আচি, ব্যাকার জীবনের অবিসাপ থাইক্কা রেহায় পাইচি, এই ব্যাবসায় নাইম্মা “

তিনি মিশন ৯০ কে আরও জানান- প্রতিদিন তিনি এক বাক্সে সাতশত আইক্রিম নিয়ে হোসেনপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। সাতশত আইসক্রিম কেনা হয়, চৌদ্দশত টাকা। অর্থাৎ ক্রয় হয় প্রতি পিচ দুই টাকা বিক্রি হয় পাঁচ টাকা।সাতশত আইসক্রিম কিনা চৌদ্দশত টাকা বিক্রি হওয়ার কথা পয়ত্রিশত টাকা।
লাভ থাকার কথা একুশত টাকা। এত্থেকে বিভিন্ন লস যেমন বারবার বাক্স খোলার তরে কিছু গলে যাওয়া, কিছু কেউ কেউ বাকির কথা বলে মাগনা খেয়ে যাওয়া। কেউ একাধিক কিনে কয়েকটা ফ্রি নেওয়া। সব মিলিয়ে প্রায় ছয়শত টাকার মত নষ্ট হয়ে অবশিষ্ট আয় থাকে প্রায় দেড় হাজার টাকা দৈনিক। পরিবহন খরচ দিতে হয়না কারন সাইকেলে করে ফেরি করে বেড়ান তিনি।

ইতিহাস স্বাক্ষী আইসক্রিম একটি জনপ্রিয় খাবার। আইসক্রিমের জন্মস্থান সূদুর চিন দেশে। ইতালির এক পর্যটক মার্কো পোলো আইসক্রিম তৈরির কৌশলটি চিন থেকে ইউরোপে নিয়ে আসেন। তৎকালীন সময়ে কুবলায় খানের মানুষজন  ঠেলাগাড়ীকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করে জমাট দুধের খাবার বিক্রি করতো। মার্কো পোলো খাবারটি খেয়ে পছন্দ করেন এবং এর কৌশল শিখে নেন। এই খাবারটির নাম পরে হয় আইসক্রিম। ১৫৩৩ সালে আইসক্রিম ইতালি থেকে প্রথম ফ্রান্স দেশে আসে এবং সেখান থেকে পরে যায় ইংল্যান্ডে। এরপর আমেরিকা সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইসক্রিম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯০০ সাল হতে আইসক্রিমের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।

কালক্রমে বাংলাদেশেও আইসক্রিম উৎপাদন শুরু হয়। যুগের বিবর্তনে আইসক্রিম তৈরির কৌশলে হয়েছে কিছুটা পরিবর্তন উপযুক্ত উপাদানের সামগ্রিক মিশ্রনের জমাট বাঁধিয়ে আইসক্রিম উৎপন্ন করা হয়। আইসক্রিমের মধ্যে দুগ্ধ চর্বি, দুগ্ধজাত উপাদান ছাড়াও চিনি, ভুট্টার সিরাপ, পানি সুস্বাদু ও সুগন্দিকারক বস্তু যেমন চকোলেট, ভ্যানিলা, বাদাম, নারিকেল, ফলের রস ইত্যাদি যোগ করা হয়।

জানা যায়, হিমায়ন প্রক্রিয়ার সময় যে বায়ু একত্রীভূত করা হয় সে বায়ুও আইসক্রিমের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আইসক্রিমের বিভিন্নজাত লক্ষ করা যায়।

দেখা মিলে কিশোরঞ্জের উপজেলাগুলির সবুজ সমষ্টিগত গ্রামাতোর মহল্লায়, দিনে আবাদী মাট চষে বেড়ানো সোনার কৃষক, ক্লান্ত দুপুরে শ্রান্তমনে গাছের তলায় বসে নারিকেলের বিশেষ উপদানে তৈরি কলকি আইসক্রিমের তৃপ্তিতে মন ও শরীর দুটোই জুড়াচ্ছে। মফস্বল গায়ের আকাঁ বাকাঁ মেঠো পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে আইসক্রিম বিক্রেতা। মুখে বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে,

“ও—ই আইক্রিম! খাইলেও পস্তাইবাইন, না খাইলেও পস্তাইবাইন, পরে আইলে পাইতাইন না। কইলজা ঠান্ডা তু দুনিয়া ঠান্ডা।”

সাতে সাতে বাক্স খুলে ডাকনা দিয়ে আওয়াজ দিচ্ছেন। চারদিক থেকে জিবের আগাঁয় রুচির পানি নিয়ে ছুটে আসেন ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা।

কখনো কখনো গাড়ী থামিয়ে প্রতিকের দৃষ্টি ফেলছেন তৃষ্ণার অবসান ঘটাতে। আমরা কথা বলছিলাম একজন মোটরসাইকেল আরোহী মহশিন আহম্মেদ হক মিয়া (২৮) এর সাথে তিনি বলেন- প্রভাসে ছিলাম দীর্ঘ দিন আমাদের দেশীয় স্বাদের আইক্রিম খুজেছি অসংখ্য নামী দামী আইস্কিমের ভিড়ে, কিন্তু আমার দেশীয় স্বাদ কেবল দেশেই সম্ভব তাই মন্টা চাইলো একটা আইসক্রিম খেতে।

আইসক্রিম বিক্রেতা ছলিমের ভাষ্যমতে-তারা ছোট বাচ্চাদের আগ্রহ বাড়াতে চরকার মাধ্যমে লটারীর ব্যাবস্থা করেন।ক্রেতারা একটার দামে একাদিক আইসক্রিম নিতে পারে বিজয়ী হয়ে।

জানা যায়-কিশোরগঞ্জের প্রতি উপজেলায় আইসক্রিম তৈরির বহু কারখানা রয়েছে। হোসেনপুরে উপস্থিত একটি কারখানা সংশ্লিষ্ট জৈনেকের তত্বমতে একটি কারখানা থেকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ জন ব্যবসায়ী আইসক্রিম ক্রয় করেন।

হিরন চন্দ্র দাস (৩০) আমাদের বলেন-আমাদের কিশোরগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় নারিকেল সম্বলিত দেশীয় আইসক্রিম “কলকি আইসক্রিম” বহুল জনপ্রিয়। আর এ পেশায় বহুজনকে দেখেছি স্বনির্ভর হতে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker