ইতিহাস ও ঐতিহ্য

মহিলারা দলবেঁধে উকুন ধরার দৃশ্য সম্প্রীতির অভাবে বিলুপ্ত

মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:

গ্রামাঞ্চলে বাড়ির উঠোনে কিংবা ঘরের সিঁড়িতে বসে মহিলারা দল বেঁধে মাথার চুল থেকে উকুন ধরার দৃশ্য এখন সচরাচর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে ও সম্প্রীতির ঘাটতির কারণে  মহিলারা এখন আর  দলবেঁধে কোন সামাজিক কাজেই সম্পৃক্ত থাকে না।  অত্যাধিক মোবাইল, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের আসক্তি, যৌথ ফ্যামিলি ভেঙ্গে একান্নভুক্ত পরিবারের কারণে এখন মহিলারাও সচরাচর এক সাথে সমবেত হয় না। মহিলাদের একজন আরেকজনের মাথা থেকে উকুন ধরার দৃশ্য নতুন প্রজন্মের কাছে  অচেনা ও অজানা। গ্রাম বাংলা প্রাচীনতম সম্প্রীতির মেলা বন্ধন জিনিসটি আজ হারিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক ও যান্ত্রিকতার যুগে মানুষ নিজেকে কর্মে ব্যস্ত রাখায় সম্প্রীতির ঘাটতি ঘটেছে বলে জানান সমাজ বিজ্ঞানীরা।

মাথায় উকুন হওয়া আমাদের দেশে পরিচিত ও বিব্রতকর সমস্যা।পুরুষের তুলনায় নারীদের চুলে উকুনের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়। যার মধ্যে কিশোরীদের মাথায় বেশি উকুন হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ১২ বছর বয়সে উকুন বেশি দেখা যায়।

উকুন উড়তে বা লাফ দিতে পারে না। সাধারণত একজনের মাথা, শরীর থেকে সরাসরি অন্যজনের মাথা, শরীরে চলে যেতে পারে। আবার একজনের ব্যবহৃত চিরুনি, ব্রাশ, বালিশ, চুলের ফিতা, রাবার ব্যান্ড, বিছানার চাদর, গামছা, তোয়ালে ইত্যাদির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।

এখনো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন  গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবারে দেখা যায় মহিলাদের মধ্যে সম্প্রীতি বিরাজ করছে। এখনো সবাই মিলে একসাথে দলবেঁধে মাথার উকুন ধরে থাকেন। উকুন ধরতে গিয়ে একে অপরের মাঝে সাংসারিক থেকে শুরু করে  বিনোদনের আলাপচারিতা হয়ে থাকে।

স্থানীয় মহিলা ডিগ্রি কলেজের সমাজকর্ম বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক কামাল উদ্দিন  বলেন , গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরেও যৌথ পরিবার ভেঙ্গে খানখান হয়ে যাচ্ছে । ফলে পারিবারিক সম্প্রীতির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।মোবাইল ও টেলিভিশনে অত্যাধিক আসক্তির কারণে এখন উকুন ধরার দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না বলেও জানান তিনি।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker