ইতিহাস ও ঐতিহ্য

‘নৌকাবাইচ’ দৃষ্টিনন্দন ও রোমাঞ্চকর লোকসংস্কৃতির একটি অংশ

নৌকাবাইচ আবেগ ও উত্তেজনায় হয়ে ওঠে মানুষের নিবীড় আনন্দ। বাংলাদেশে মানুষের নদীমাতৃক নদীর তরঙ্গভঙ্গের সঙ্গে শৈশব থেকেই মিতালি। তাই নদী হয়ে উঠেছে আমাদের মানুষের প্রাণোচ্ছল ক্রীড়া সঙ্গী। নদীবক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নৌকা শুধু যোগাযোগের মাধ্যমই নয়, হয়ে উঠেছে জলক্রীড়া। নৌকাবাইচ দৃষ্টিনন্দন ও রোমাঞ্চকর। বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অংশ। এটা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে গ্রামবাংলার মানুষের জীবনের সাথে আবহমান কাল থেকে। কেননা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের হাসিকান্না, আনন্দ-বেদনা ও আশা-নিরাশার মধ্যে রয়েছে খাল, বিল ও নদীর ছোঁয়া। নদ-নদীর প্রবল উপস্থিতি।

আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় রয়েছে নৌকা বাইচ। যা সমৃদ্ধির ফসল হিসেবে বিবেচিত। নৌকা বাইচ আমাদের লোকালয় ও সংস্কৃতিতে। নৌকা বাইচ বাংলাদেশের একটি বর্ণাঢ্য ও নৈপুণ্য মন্ডিত্য খেলা। বলা যায় নৌকার আবিষ্কার জীবনের তাগিদেই। আর বিনোদনের তাগিদেই শুরু হয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। নৌকায় ওঠার আগে সবাই পাক-পবিত্র হয়ে একই রঙের রুমাল মাথায় বেঁধে গায়ে গেঞ্জি পরে নেন। বৈঠা চালানোর মাঝিদের মধ্যে থাকেন নৌকার নির্দেশক। নদীমাতৃক বাংলাদেশে শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ, সবাই আগ্রহ নিয়ে ছুটে চলেন নৌকাবাইচ দেখতে। নদীবক্ষে সঙ্গীতে তাল-লয়ে মাল্লাদের ছন্দময় বৈঠা নিক্ষেপে নদী-জল আন্দোলিত করে যে মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা হয়, যা অতুলনীয়।

অনেকগুলো দলের মধ্যে নৌকা চালনা প্রতিযোগিতাই হলো নৌকা বাইচ। নৌকা বাইচের সময়কাল ভাদ্র মাস, নদীর বুকে পানি যখন শীতল ধারায় বয়ে চলে, তখনই শুরু হয় আয়োজন।

এসব বাইচ নৌকা তৈরিতে সাধারণত শাল, গর্জন, শিল কড়ই কাঠ ব্যবহৃত হয়। বাইচ শুরু করার আগে বিশেষভাবে মেরামত করা হয় নৌকা। ছাই এর সাথে দেশীয় বিভিন্ন দ্রব্য মিশিয়ে বিশেষভাবে পেস্ট বানিয়ে নৌকায় ফাটল বা ছিদ্র বন্ধ করা হয়। তারপর দেশীয় গাব পিষ্ঠ করে কষ বের করা হয়। প্রলেপ দেয়া হয় পুরো নৌকায়। কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নৌকা মসৃণ করার জন্য মাখান হয় সরিষাার তেল। এতে নৌকা এগিয়ে চলে দ্রুত। নৌকাসহ বৈঠাতে বিভিন্ন ধরনের রঙে রাঙিয়ে তোলা হয়। নৌকাতে করা হয় কারু কাজ। মাল্লাদের বৈঠার চুছছাপ শব্দে নৌকা এগিয়ে চলে, বৈঠা দাপানো কায়িক পরিশ্রমের কাজ, এ পরিশ্রমকে কিছুটা লাঘবের জন্য তারা সমস্বরে বিভিন্ন ধরনের গান গেয়ে থাকে যা প্রতিযোগিতা হয়ে উঠে আনন্দঘন, ঢোল-করতাল নিয়ে বাদক আর গায়েনরা নৌকার মধ্যে বসে তালে তালে মাঝিদের উৎসাহ জোগান। একদল মাঝি নিয়ে একেকটি দল গঠিত হয়। নদীর দুই ধারে সারিবদ্ধ ভাবে, ব্রিজের উপর, ছোট ছোট ডিঙি নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে দর্শনার্থীরা তা উপভোগ করেন।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker