বিনোদন

কাজলরেখার ব্যবচ্ছেদ: ভালো চলচ্চিত্রের গুণ, দেখার পর রেশ রয়ে যায় বহুক্ষণ

‘কেমন কইরা মন কাড়িবো ওরে নিঠুরিয়া
তোর প্রাণ হরিবো কেমন কইরা
পাই নাগো তার দিশা…’

কাজলরেখার জন্য রাজার এই ব্যাকুলতা দর্শক হিসেবে টের পাই আমিও। ভালো চলচ্চিত্রের গুণ হচ্ছে, দেখার পরও এর রেশ রয়ে যায় বহুক্ষণ। ‘কাজলরেখা’ সিনেমাটা দেখেছি এক পক্ষকাল বিগত কিন্তু এর রেশ যেন কাটছেই না।

ছোটবেলায় পড়েছি কাজলরেখা। ভাবলাম, চেনা গল্প আর কতোইবা ভালো লাগবে? কিন্তু ভালো লেগেছে বেশ। মনের মধ্যে কাজলরেখার গান বাজছে গুনগুন করে। সবই যে ভালো ছিল, তা বলব না। বিরতির আগে মনে হচ্ছিল– ‘কোনোরকম’ একটা সিনেমা হয়েছে। বিরতির আগে সিনেমাটোগ্রাফি দুর্বল ছিল। দু’জন শিল্পীর অভিনয় কাঁচা মনে হয়েছে।

কামরুল হাসান খসরুর সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিরতির আগে চিত্রগ্রহণ কেন এমন হলো, সে প্রশ্নের জবাব তিনি আর পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিমই ভালো দিতে পারবেন। মনে হচ্ছিল, শট নেয়ার ক্ষেত্রে তারা বুঝি তাড়ায় ছিলেন অথবা বাজেট শেষ হয়ে গিয়েছিল। কাজলরেখাকে বনবাসে দেয়ার সময়কার শটগুলো দেখে মনে হয়েছে– নেয়ার জন্যে নিয়েছেন, রুপকথার ছোঁয়ার কমতি ছিল সেখানে।

যাদের অভিনয় দেখে মনে হয়েছে ‘অভিনয়’, তাদের নাম না-ই বা বললাম (ছবি এখনও থিয়েটারে চলছে)। তবে দাস-দাসীদের চরিত্র ছিল নজর কাড়ার মতো। ছোট্ট উপস্থিতিতে পর্দা উজ্জ্বল রেখেছে। ভালো করেছে ছোট কাজলরেখা হিসেবে সাদিয়া আয়মান। ভালো লেগেছে তার ন্যাচারাল লুক। আজাদ আবুল কালাম কয়েকটি ভিন্ন চরিত্রে এসেছেন এই সিনেমায়। সবগুলোতেই তার অভিনয়ের শক্তি দেখিয়েছেন।

বিরতির পর শুরু হয় সিনেমাটির জাদু। শরিফুল রাজের ‘পরাণ’ দেখে মনে হয়েছিল, রাজ হয়তো এমন বাউণ্ডুলে চরিত্রেই কেবল ভালো করবে। তবে এখানে রাজের ‘রাজা’ চরিত্রটি রাজকীয়ই ছিল। ঘরের সব কাজ করার পরও কাজলরেখার গঠন বেশ আদুরে ছিল, বেমানান লেগেছে। শুনেছি, চরিত্রের প্রয়োজনেই ওজন বাড়িয়েছে মন্দিরা চক্রবর্তী কিন্তু এর কি কোনো প্রয়োজন ছিল? যদিও মন্দিরার অভিনয় নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মিথিলা পাকা অভিনেত্রী। এখানেও তার প্রমাণ রেখেছেন।

পুরো চলচ্চিত্রে বাংলার আদিকাল যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, সেটা অভাবনীয়। বাংলার সেই রূপ দেখতে আমি আবারও ‘কাজলরেখা’ দেখতে চাই। ভালো লেগেছে কস্টিউম, মেকআপ, সেট-লোকেশন। মেকআপে পরিমিতিবোধ এ ছবির বড় গুণ। অধিকাংশ দৃশ্যায়ন হয়েছে নেত্রকোণায়। ‘বিদেশে না গিয়েও ভালো ছবি হয় রে মনা’, পরিচালক হয়তো এ কথাটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন অথবা করেছেন। গানগুলো একবার শুনলে বারবার শুনতে মন চাইবে। বিশেষ করে ‘ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু’, ‘হলুদ রে তুই’ গান দুটি গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার শুনলাম।

তবে এ ছবির সবচেয়ে বড় শক্তি গল্প। পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম গল্পের মালা গেঁথেছেন দারুণ করে। আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, এমন একটা গল্প যদি আজ দক্ষিণ ভারতের কোনো নির্মাতার হাতে পড়ত, ওরা এটা থেকে ‘বাহুবলী’, ‘আরআরআর’ অথবা ‘কেজিএফ’-এর মতো ব্যবসা করে নিতো! কাজলরেখার গল্প আপনাকে কিছুতেই অন্যদিকে মন সরাতে দেবে না। বাংলা চলচ্চিত্রের গল্প দুর্বল– এ কথার দিন বুঝি এবার ফুরোলো, নটে গাছটিও মুড়োলো।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker