স্বপন মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সিমান্তবর্তী চরগিরিশ ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঢুকে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মরত দুলাল মিয়ার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত দুলাল মিয়া চরগিরিশ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অফিস সহায়ক (পিয়ন) ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার দুবলাই এলাকার মৃত খুববর মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় স্থানীয় নাটুয়ারপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ দিতে গেলে স্থানীয় ভাবে মিমাংসা হওয়ার কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। এদিকে ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগী ঐ কিশোরী।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, চরগিরিশ ইউনিয়নের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন ভুক্তভোগী। স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঔষধ নিতে গেলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিয়ন দুলাল মিয়া প্রায় সময় ওই কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দিতো। ঐ কিশোরী বারবার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখান করলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে দুলাল মিয়া। এ ঘটনার জেরে গত মাসের ১৮ তারিখ রাত ১০ টার দিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঢুকে উৎপেতে বসে থাকে দুলাল মিয়া। ভুক্তভোগী মধ্য রাতে টয়লেট করার জন্য বের হয়ে ঘরে ফেরার সময় পিছন থেকে দুলাল মিয়া ঐ কিশোরীর চোখ-মুখ গামছা পেঁচিয়ে চেপে ধরে। জোর করে কিশোরী শয়ন ঘরে নিয়ে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় ওই কিশোরীর চিৎকারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে কিশোরীকে উদ্ধার করে।
বিষয়টি জানা জানি, হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কিশোরীর পরিবারকে টাকার লোভ ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবার।
এ ঘটনায় স্থানীয় নাটুয়ারপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ দিতে গেলে স্থানীয় ভাবে মিমাংসা হওয়ার কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দেয় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান। এদিকে ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভয়ে আশ্রয়ন প্রকল্প ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভুক্তভোগী ঐ কিশোরী।
ভুক্তভোগী কিশোরী বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঔষধ নিতে গেলে দুলাল আমাকে একা পেয়ে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিতো। আমি না করলে আমার উপর রেগে যেতো সে। তার ভয়ে ঢাকা চলে যাই আমি। বাড়ীতে বেড়াতে আসলে খবর পেয়ে সে আশ্রয়ণ প্রকল্পে এসে উৎ পেতে থাকে। রাতে টয়লেটের জন্য বের হলে পিছন থেকে এসে মুখ চেপে ধরে আমাকে ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। চিৎকার দিলে সবাই এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করে। এরপর থেকে শফিকুল মেম্বার ও দুলাল আমাকে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। তাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমি। আমার হিন্দু পরিবার অসহায়ের মতো সবার কাছে বিচার দাবি করে ঘুরছি।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুলাল মিয়া আমার মেয়েকে প্রায় সময় খারাপ কাজ করতে প্রস্তাব দিতো। এর পরে মেয়েকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই বাসাবাড়ী কাজে। মেয়ে বাড়ীতে আসার খবর শুনে রাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঢুকে আমার মেয়ের মুখেচোখে গামছা পেচিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে যায়। তার চিৎকার শুনে আমরা সবাই গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করি।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর থেকেই শফিকুল ইসলাম মেম্বার টাকার লোভ দেখাচ্ছে। নেইনি বলে ভয়ভীতি দেখায়। পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দিতে গেলেও আমাকে মিমাংসা হওয়ার কথা বলে ফিরিয়ে দিয়েছে। এই ভয়ে মেয়েকে ঘরে আনতে পারছিনা। আমরা হিন্দু মানুষ বড় সহায়তা হয়ে পড়েছি। এ ঘটনার বিচার দাবি জানান তিনি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা অনেকেই বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে একের পর এক ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। হিন্দু মেয়েটাকে জোর করে চোখ-মুখ পেচিয়ে ঘরে তুলে ধর্ষণের চেষ্টা করে দুলাল মিয়া। চিৎকার করলে দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে আমরা উদ্ধার করি। আর শফিকুল মেম্বার এসে ছেলেটাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। আমরা এর বিচার দাবি করি।
অভিযুক্ত দুলাল মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটি ঢাকা থেকে বাড়ীতে আসছে বলে তাকে দেখতে যাই। যাওয়া মাত্রই আমাকে ঘরে তুলে আটকিয়ে রাখে। ঘটনা যাতে ছড়াছড়ি না হয় তাই স্থানীয় শফিকুল মেম্বারকে দিয়ে ২৫ হাজার টাকা মেয়েটার পরিবারকে দিতে বলেছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এই ওয়ার্ডের মেম্বার কোনো ঘটনা হলে আমাকে যেতেই হবে। আমিই দুলালকে ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছি। স্থানীয় মাতাব্বর ও পুলিশ এসে তদন্ত করে গেছে কোনো ঘটনাই হয়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে সে কখনো জোরজবরি করে না বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে নাটুয়াপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মেয়েটির পরিবার বিষয়টি আমাকে বলতে এসেছিল। স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি মিমাংসা করে দিবে বলে তারা অভিযোগ না দিয়ে চলে যায়। পুনরায় অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।’
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts to your email.