অর্থনীতি

নীতি পরিবর্তনও কাজে আসছে না, ক্রমেই চাপ বাড়ছে দেশের অর্থনীতিতে

ক্রমেই চাপে পড়ছে দেশের অর্থনীতি। রিজার্ভ, ডলার, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন সূচকেই নেতিবাচক অবস্থা। টেনে তুলতে বারবার নীতির পরিবর্তন হচ্ছে, তবে টেকসই হচ্ছে না কোনো কিছুই। করোনা মহামারি এবং বিশ্বব্যাপী যুদ্ধাবস্থার প্রভাব কাটিয়ে অন্যান্য দেশ যেখানে ঘুড়ে দাঁড়াচ্ছে; সেখানে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি।

অন্যদিকে, জনগণের কাছ থেকে কর-ভ্যাট ও বিভিন্ন শুল্কের মাধ্যমে সরকার যে আয় করে, সেই রাজস্ব খাতেও ঘাটতি আছে প্রত্যাশার তুলনায়। চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ব্যাংক খাতের খেলাপি ও ঋণ জালিয়াতির ঘটনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, খুব সহসা সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হচ্ছে না। সংস্কার উদ্যোগ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার পরামর্শও তাদের।

সরকারের হিসাবে, এক বছর আগে ১০০ টাকায় যে খাদ্যপণ্য কেনা যেতো, তা এখন কিনতে গুণতে হচ্ছে ১১০ টাকা। বাস্তবে এ তথ্যের সঙ্গে একমত হতে চান না অনেক ক্রেতা। তাদের মতে, দাম বেড়েছে আরও অনেক বেশি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হার কাগজের চেয়ে বাজারে বেশি। দরিদ্ররা টিসিবি, রেশন কার্ডের মতো সরকারের বিভিন্ন স্কিমের উপকার পেলেও নির্দিষ্ট মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর অবস্থা আরও খারাপ।

এবিষয়ে খিলগাঁওয়ের এক নারী বলেন, খেয়ে না খেয়ে চলতে হচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়েই চলেছে। আয় তো বাড়েনি। তাই আগের আয়েই যেটুকু কেনা যায় তা দিয়েই চলতে হচ্ছে। আরেকজন বলেন, রাতে খাই, না হলে দুপুরে খাই। কী করবো? জিনিসপত্রের যে দাম কোথা থেকে বাড়তি টাকা পাবো?

ভোক্তার ওপর মূল্যের চাপ প্রকট দেখে বাজারে টাকার সরবরাহ কমানোসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবুও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি যখন প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল তখন যেসব নীতি গ্রহণের প্রয়োজন ছিল সেগুলো নেয়া হয়নি। যখন মুদ্রাস্ফীতি তীব্র হয়ে উঠেছে, তখন মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কাজেই এক্ষেত্রে অনেক বিলম্ব করা হয়েছে।

সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশে সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। আমদানি শুল্ক কমাতে হবে বলে জানান তিনি।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে, বিদেশি মুদ্রা পাঠান। পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য-সেবা রফতানি থেকেও আসছে ডলার। তবুও অস্থিরতা কাটছে না ডলারের দামে। সম্প্রতি এক ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়েও কূল-কিনারা হচ্ছে না। ডলারের রিজার্ভ বাড়াতে ৩০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা যে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন, সেখানেও তাদের খরচের জন্য এক ডলারের দাম ধরা হয়েছে ১২৩ টাকা। টাকার অবমূল্যায়ন বড় ধরনের আঘাত হানছে প্রতিদিনের অর্থনীতিতে।

অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, আমরা যদি আয় না করে বেশি ব্যয় করি তাহলে তো রিজার্ভের ওপর চাপ পড়বেই। রফতানি আয় বাড়াতে হবে। এজন্য একটি পণ্যের ওপর ভরসা করা চলবে না। দেশের পণ্য বাইরের দেশে বিক্রির বাজার খুঁজতে হবে। এদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখার পরামর্শও দেন এই অর্থনীতিবিদ।

এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমানোর পরামর্শও তার।

বলা হয়, ঋণের সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক নিবিড়। সামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ গ্রহণ এবং নিয়মিত পরিশোধ করে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। তবে সম্প্রতি বিদেশি ঋণের হিসাব-কিতাবও মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে। মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার টাকা। ধারাবাহিকভাবে এ দায় শোধ করতেও চাপে পড়ছে অর্থনীতি।

এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, বেসরকারি ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। কেননা, বেসরকারি ঋণে সুদ বেশি দিতে হয়। পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের সময়ও কম পাওয়া যায়। সেজন্য তিনি বেসরকারি ঋণ কম নেয়ার আহ্বান জানান।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker