বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার, জেল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন এম খায়রুজ্জামানকে প্রত্যর্পণে মালয়েশিয়ার আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ার পর দেশটির সরকার তাকে মুক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
খায়রুজ্জামানের আইনজীবী জিও চো ইংকে উদ্ধৃত করে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্টার জানিয়েছে, পুত্রাজায়ায় ইমিগ্রেশন বিভাগের ডিটেনশন সেন্টার থেকে বুধবার বিকেলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রিটা রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে ছেড়ে দিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। আমাদের আইনজীবীকে খবর দিয়েছিল, তারা গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছে।”
খায়রুজ্জামান তার মুক্তির জন্য আদালত, আইনজীবী ও মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
তিনি টেলিফোনে মালয়েশিয়ার ওই সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মিথ্যা অভিযোগে’ গ্রেপ্তারের পর থেকে তিনি মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা খুবই উদ্বিগ্ন ছিলেন।
যত দ্রুত সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছার কথা ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে বলেছেন খায়রুজ্জামান।
এম খায়রুজ্জামান। ছবি: ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেএম খায়রুজ্জামান। ছবি: ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেএক যুগের বেশি সময় ধরে শরণার্থী হিসেবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করে আসা অবসরপ্রাপ্ত মেজর খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
চার দলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে সেখানেই থেকে যান।
দীর্ঘদিন ধরে আড়ালে থাকা সাবেক এই কূটনীতিককে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ।
পরদিন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনের বরাতে দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার জানান, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে’।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ওইদিন সাংবাদিকদের বলেন, অভিবাসন আইন ভাঙায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় কোনো প্রবাসীর এমন অপরাধ পেলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের দিন তাকে মুক্তি দিতে মালয়েশিয়ার সরকারকে আইনি নোটিস পাঠান তার স্ত্রী রিটা রহমানের নিয়োগ করা আইনজীবী।
তাতে সাড়া না পেয়ে তারা আদালতে যান। সেই আবেদনের শুনানি করে মঙ্গলবার কুয়া লালামপুর হাই কোর্ট খায়রুজ্জামানকে ঢাকায় ফেরত পাঠানোর ওপর অন্তর্বতী নিষেধাজ্ঞা দেয়।
ওই আবেদনে খায়রুজ্জামানকে আদালতে হাজির করার (হেবিয়াস কর্পাস) আর্জিও জানিয়েছিলেন আইনজীবী। এ বিষয়ে শুনানির জন্য আদালত ২০ মে তারিভ রেখেছে বলে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছিল।
তবে খায়রুজ্জামানের স্ত্রী বলছেন, মুক্তি পাওয়ার পর সেই আবেদনের কার্যকারিতা বা শুনানির প্রয়োজনীয়তা ‘থাকছে না’।
”সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ না থাকলে মালয়েশিয়ায় কাউকে আটক রাখতে পারে না। সে কারণে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে ওরা।”