ভারত-পাকিস্তান সংঘাত: ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন যুদ্ধের সূচনা?
কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে; ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন সংঘাতের সূচনা?
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট:
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহালগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। এই হামলার দায়ভার পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তইয়্যেবা সংগঠনের শাখা ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের ওপর চাপায় ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায়, ৭ মে ভারত “অপারেশন সিন্ধুর” নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের অন্তত ছয়টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যাতে ৩১ জন নিহত হন, যার মধ্যে দুই শিশু ছিল। এরপর থেকে, উভয় দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ তুলেছে, যা সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান উত্তেজনার মূল শিকড় রয়েছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগে। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর, ধর্মীয় ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দেশভাগের সময় কাশ্মীরের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কাশ্মীরের মহারাজা প্রথমে স্বাধীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, পাকিস্তানি উপজাতীয়দের আক্রমণের পর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে, ১৯৪৭-৪৮ সালে প্রথম ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে।
পরবর্তী সংঘাত ও চুক্তিসমূহ:
-
১৯৬৫: দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, যা আবারও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়। যুদ্ধের পর তাসখন্দ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
-
১৯৭১: তৃতীয় যুদ্ধ, যা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়। এর ফলে, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
-
১৯৯৯: কারগিল যুদ্ধ, যেখানে পাকিস্তানি সেনারা কাশ্মীরের কারগিল অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের প্রতিহত করে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
বর্তমানে, ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলছে। ভারত দাবি করছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয় ও সহায়তা দিচ্ছে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করছে। এই উত্তেজনার মধ্যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে, উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে; ভারত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছে এবং পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করেছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা ও কাশ্মীর ইস্যুতে বিরোধ নতুন করে সংঘাতের রূপ নিচ্ছে। উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর হওয়ায়, এই উত্তেজনা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা ও উভয় দেশের সংযম প্রদর্শনই এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে।