টাঙ্গাইলে জেমসের কনসার্টে দর্শকের ঢল!: অধিক চাপে অচল হয়ে পড়েছিল মোবাইল নেটওয়ার্ক
গত ১৩ মে টাঙ্গাইলে জেমস কনসার্ট দেখতে কয়েক লাখ লোকের সমাগমে স্টেডিয়াম ও আশপাশে ভয়াবহ মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়; এটি প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার ফলাফল, পরিকল্পিত ব্লকড নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
মিশন নাইনটি রিপোর্ট: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ১৪ মে ২০২৫
গতকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল শহরের শহীদ মারুফ জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিবিএফসি আয়োজিত জমকালো কনসার্টে জনপ্রিয় ব্যান্ডশিল্পী নগর বাউল জেমস তার বিখ্যাত গান দিয়ে মঞ্চ মাতিয়েছেন। এই ব্যতিক্রমী কনসার্ট উপভোগ করতে শহরের ভেতর ও বাইরে থেকে কয়েক লাখ মানুষ ভিড় জমিয়েছিল। তবে বিনোদনের তীব্র উত্তাপের মধ্যে হঠাৎ করেই একটি বিরক্তিকর বাস্তবতা সামনে আসে! স্টেডিয়াম ও এর আশপাশের বিশাল এলাকা জুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে।
কী ঘটেছিল? নেটওয়ার্ক জ্যামের কারণ বিশ্লেষণ
কনসার্টে উপস্থিত দর্শকের অভিযোগ, সেই সময়ে কেউ মোবাইল থেকে কল করতে পারছিলেন না, মোবাইল ডেটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং এসএমএস পাঠানোও সম্ভব হচ্ছিল না। মূলত, বিপুল সংখ্যক সংযোগের চেষ্টায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পুরোপুরি জ্যাম হয়ে পড়েছিল। মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা আসেনি, তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো পরিকল্পিত নেটওয়ার্ক ব্লকড ছিল না, বরং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার ফলাফল।
প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ (ইনফো ফ্যাক্টস):
বিশেষজ্ঞদের ধারণা এবং আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী:
- সম্ভাব্য দর্শক সংখ্যা ছিল প্রায় ২.৫ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ।
- এর মধ্যে প্রায় ৮০% মোবাইল ব্যবহারকারী ছিলেন, যা প্রায় ২.৪ লক্ষ জন।
- প্রতি ব্যক্তির কাছে গড় সিম বা ডিভাইস সংখ্যা ছিল ১.৫টি (অনেকে একাধিক সিম বা ফোন ব্যবহার করেন), ফলে মোট সক্রিয় সংযোগের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩.৬ লক্ষ।
- কনসার্ট চলাকালীন সময়ে প্রায় ৬০% সংযোগ একযোগে নেটওয়ার্কে প্রবেশের চেষ্টা করে, অর্থাৎ প্রায় ২.১৬ লক্ষ সংযোগ।
- অন্যদিকে, টাঙ্গাইল শহরের মোট টাওয়ার সংখ্যা (গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, টেলিটক মিলিয়ে সম্ভাব্য) ছিল প্রায় ৩০টি।
- প্রতিটি টাওয়ারে ৪জি সক্রিয় সংযোগ ধারণক্ষমতা গড়ে প্রায় ৪,০০০।
- এ হিসাবে টাঙ্গাইল শহরের সর্বোচ্চ সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক ক্যাপাসিটি ছিল ৩০ x ৪,০০০ = ১.২০ লক্ষ সংযোগ।
- অর্থাৎ, নেটওয়ার্কে চাপ এসেছিল প্রায় ২.১৬ লক্ষ সংযোগের, যা মোট ক্ষমতার চেয়ে প্রায় ৮০% বেশি! ফলে নেটওয়ার্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে না পেরে কার্যত ভেঙে পড়েছিল।
এ ধরনের পরিস্থিতিকে প্রযুক্তিগতভাবে “নেটওয়ার্ক কনজেশন” বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ডিভাইসের সংখ্যাই নয়, সঙ্গে ব্যাকহল (ব্যান্ডউইথ) এবং স্পেকট্রাম শেয়ারিংয়ের ওপরও নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা নির্ভর করে। কনসার্টের মতো বড় জনসমাগমে বহু সিম ব্যবহার, হটস্পট তৈরি, ভিডিও লাইভ করা এবং আপলোড করার মতো কার্যকলাপগুলো দ্রুত ব্যান্ডউইথ নিঃশেষ করে ফেলে।
ভবিষ্যতের জন্য করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এমন পরিস্থিতি এড়াতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- বড় জনসমাগমের স্থানে অস্থায়ী টাওয়ার (Cell on Wheels) মোতায়েন করা।
- WiFi Offloading ব্যবস্থাপনা চালু করা।
- বিশেষ ইভেন্ট চলাকালীন মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে স্থানীয় নেটওয়ার্ক সমন্বয় করা।
- লোকাল নেটওয়ার্ক স্লাইসিং ও প্রায়োরিটি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে জরুরি সংযোগের ব্যবস্থা রাখা।
জেমসের কনসার্ট ছিল সংগীতের এক দারুণ মহোৎসব যা হাজার হাজার দর্শক উপভোগ করেছেন। কিন্তু এই ঘটনাটি প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভাবিয়ে তোলে। ডিজিটাল বাংলাদেশে শুধু মানুষ নয়, মোবাইল সংযোগের ব্যবহারও বেড়েছে বহুগুণ। তাই ভবিষ্যতে বড় জনসমাগম মানেই এখন শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নয়, ডিজিটাল সংযোগ ব্যবস্থাপনারও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। টাঙ্গাইলের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে মোবাইল অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।