ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৫ হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত: প্রমাণ আন্তর্জাতিক সংস্থায় পাঠাবে রেড ক্রিসেন্ট
এক সপ্তাহে তীব্র হয়েছে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত; মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বিশ্ব।
গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের পাঁচটি হাসপাতাল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে বহু চিকিৎসাধীন রোগীর সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। আজ শুক্রবার ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ তথ্য জানিয়েছেন ইরানের জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান। বিবিসরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় হাসপাতালের রোগীরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন।
কোলিভান্দ বলেন, “বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যাও তৈরি করেছে।” তিনি আরও জানান, হাসপাতালগুলোতে এসব হামলার প্রভাব এবং এর প্রমাণ রেডক্রসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় পাঠানো হবে, যা যুদ্ধের নিয়মনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার আকাশযুদ্ধ এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেছে, যা আঞ্চলিক উত্তেজনাকে চরমে নিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ইরানকে আবারও আলোচনার টেবিলে ফেরানোর জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সরাসরি জড়াবে কিনা, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা কি ইরানের শাসনব্যবস্থার পতন ঘটাতে চাই? এটা হতে পারে হামলার ফলাফল, তবে এটা নির্ভর করছে ইরানি জনগণের ওপর—তারা চাইলে স্বাধীনতার জন্য উঠে দাঁড়াতে পারে।’”
গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করে এই দাবি করে যে, তারা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে চায়। জবাবে ইরানও ইসরায়েলে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
ইরানের মানবাধিকার কর্মীদের সংবাদ সংস্থা (হারানা) জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বেসামরিক নাগরিকরা রয়েছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরানের পাল্টা হামলায় অন্তত দুই ডজন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তবে কোনো পক্ষের দেওয়া নিহতের সংখ্যা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইসরায়েল মূলত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানালেও, পশ্চিমা ও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, তারা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সরকার পতনের চেষ্টাও করছে। ইরান দাবি করেছে, তারা শুধু সামরিক ও প্রতিরক্ষা ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েল জানিয়েছে, ইরানের হামলায় একটি হাসপাতাল ও আরও কিছু বেসামরিক স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই চলমান সংঘাতে ক্রমেই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা এবং মানবিক সংকট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন দ্রুত কূটনৈতিক সমাধানের দিকে আহ্বান জানাচ্ছে।