পাবনা

সিজারের পর মেলেনি বাচ্চা, ডাক্তার বললেন ‘ফলস প্রেগনেন্সি’

পাবনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক নারীর সিজারের পর বাচ্চা না পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়িারি) এ ঘটনায় সদর থানায় লিখিত অভিযোগের পর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

এর আগে, শনিবার রাতে শহরের শাপলা প্লাস্টিক মোড় এলাকার মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, নবজাতককে চুরি করে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসক বলছেন, এটি ফ্যাগনম প্রেগনেন্সি অর্থাৎ ফলস প্রেগনেন্সি।

ভুক্তভোগী রোগী আকলিমা খাতুন আঁখি পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার মাসুমদিয়া ইউনিয়নের রতনগঞ্জ গ্রামের নজরুল ইসলাম গাছীর স্ত্রী।

রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার সিজারের জন্য আকলিমা খাতুনকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন আল্ট্রাসনোগ্রাফিসহ সকল ডাক্তারি রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়। পরে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা: শাহীন ফেরদৌস শানু রোগীর অপারেশন করান।

সিজারের পর চিকিৎসক জানান, রোগীর গর্ভে কোনও বাচ্চা ছিল না। আর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের রিপোর্ট রেখে সম্প্রতি করা রোগীর সকল ডাক্তারি রিপোর্ট গায়েব করে দেন।

রোগীর স্বামী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশনের সময় একবার বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেছে। হয়তো বাচ্চাটি তাদের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। নয়তো চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছে। এক থেকে দেড় মাস আগেও এই চিকিৎসক আকলিমার চেকআপ করেছিলেন।’

হাসপাতালের পরিচালক সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘সিজারের রোগী হিসেবেই ভর্তি করা হয়েছিল আকলিমাকে। কিন্তু রোগীর গর্ভে কোনও বাচ্চা ছিল না। তার অন্য কোনও সমস্যা ছিল। যেটা ডাক্তার অপারেশনের মাধ্যমে সমাধান করেছেন। কিন্তু এখন রোগীর স্বজনরা বাচ্চা চুরির মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইনি সার্জন ডা: শাহীন ফেরদৌস শানু বলেন, ‘সিজারের রোগী হিসেবেই অপারেশন করতে গিয়ে দেখি তাদের ২০১৭ সালের কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু আমার পূর্বের রোগী হওয়ায় এবং রোগীর অবস্থা বিবেচনায় অপারেশন করি। কিন্তু কোনও বাচ্চা পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘এটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ফ্যাগনম প্রেগনেন্সি অর্থাৎ ফলস প্রেগনেন্সি বলে। যেখানে একজন নারী তার গর্ভধারণের সকল অনুভূতি অনুধাবন করেন। পেট বড় হয়। সবকিছু গর্ভবতীর মতো। এটা এক ধরনের রোগ। দুর্ঘটনা বা চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এটা বলা হচ্ছে।’

ডা: শাহীন ফেরদৌস শানু আরো বলেন, ‘যে রোগীর বাচ্চা হতো না, ২০১৭ সালে আল্লাহর রহমতে আমার চিকিৎসায় তার গর্ভে সন্তান এসেছে। অথচ আজ সেই রোগী ও তার স্বজনরা আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে। বিষয়টি খুবই বিব্রতকর।’

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, ‘মৌখিক অভিযোগ পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। সোমবার রোগীর স্বামী নজরুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই ও তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker