স্বপন মাহমুদ, জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে টমেটো চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পঞ্চাশী গ্রামে হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন তেমনি একজন স্থানীয় কৃষক মো: ইকবাল হোসেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় টমেটো চাষে কম খরচ করে দ্বিগুণ ফসল উৎপাদন হয়েছে তার।
এ প্রসঙ্গে কৃষক ইকবাল হোসেন জানান, ফসলের বহুমুখীতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষিত হয়ে উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আবাদ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। নিজস্ব ২-বিঘা ছাড়াও আরো ৩-বিঘা জমি বর্গা নিয়ে টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ শুরু করেন। মোট ৫-বিঘার মধ্যে ২-বিঘাতে জমিতে লাউ-ডাটা-টমেটো-শসা আবাদ করেন।
তিনি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২-বিঘা জমিতে লাউ আবাদ করে মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার লাউ বিক্রয় করেন। উক্ত লাউ আবাদ করতে তার ব্যয় হয় ২০হাজার ৮শত টাকা।
লাউ আবাদের পাশাপাশি সেই জমিতে তিনি ডাটা আবাদ করেন এবং আবাদকৃত ডাটা ১৫হাজার টাকা খরচ করে ৫৫হাজার টাকার লাভ করেন। ডাটা আবাদকালীন সময়ে তিনি উক্ত জমিতে টমেটোর চারা রোপন করেন। আবাদকৃত টমেটো চাষে ১লক্ষ টাকা খরচ করেন এবং ৪লক্ষ টাকা টমেটো বিক্রয় করে লাভবান হন।
তিনি ২০২৩ সালের জুলাই থেকে গত ৮ মাসে ২-বিঘা জমি থেকে পর্যায়ক্রমে লাউ, ডাটা, টমেটো আবাদ করে তিনি মোট ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার ২শত টাকা উপার্জন করেন। এছাড়া অবশিষ্ট ৩ বিঘা জমিতে তিনি রোপা আমন ধান, আলু এবং মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছেন।
ইকবাল হোসেন আরো জানান, ‘গত মৌসুমে ৫০ শতক জমিতে শসা আবাদ করে ১লক্ষ ২৫ হাজার টাকা লাভ করেন। তিনি আবাদ কার্যক্রমে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি হিসেবে ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ ফাঁদ ও অন্যান্য জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেন এবং সফলতা পান।
তার এই সফলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ মেনে নিরাপদ সবজি আবাদ করায় লাভবান হয়েছেন। পরামর্শ অনুযায়ী আবাদ করলে সবাই কৃষি কাজ করে লাভ করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবছর ২৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ২০ হেক্টর জমিতে। এবছর ৫ হেক্টর জমিতে গত বছরের তুলনায় বেশি টমেটো চাষ হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার আবু আল রিজুয়ান বলেন, ‘বৃহ্ত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষক ইকবাল সফল হয়েছেন। তাছাড়া অন্যান্য ফসল নিরাপদ পদ্ধতিতে আবাদের জন্য তাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং তদারকি করা হচ্ছে। বাজার মূল্য ভালো থাকায় তিনি লাভবান হয়েছেন।
এ-বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, ‘লাভজনক কৃষি নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পনা অনুযায়ী আবাদ কার্যক্রম করতে হবে। একই জমিতে বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ শস্যের বহুমুখীতা নিশ্চিত করে এবং ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পায়। কৃষি অফিসের পরামর্শ এবং মাঠ পর্যায়ে তত্ত্বাবধানের ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অর্থনৈতিকভাবে কৃষক সমৃদ্ধ হচ্ছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট কৃষি নিশ্চিতকরণে আমাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।