কিশোরগঞ্জের মোহাম্মদ আসাদুল হাসান আসাদ বিশ্বজয়ী অন্ধ হাফেজ তানভীর হোসাইনকে নিজের একটি চোখ উপহার দিতে চান।এমন সিদ্ধান্তে ব্যাপক প্রশংসায় ভাসছেন আসাদ (৫২)। মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জনমনে।
আসাদুল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে এমন একটি পোস্ট দিলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।তিনি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের সনমানিয়া গ্রামের মরহুম আয়ুব আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি শহরের নগুয়া এলাকার বাসিন্দা।
আসাদ কিশোরগঞ্জ জেলার স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে নানা ভাই নামে পরিচিত। সেই যুবক বয়স থেকেই নিয়মিত রক্তদান করে আসছেন এবং রক্ত ম্যানেজ করে আসছেন আসাদ। সর্বমোট ৭৩ তম বারের মতো রক্ত দিয়েছেন। তার বাড়ির নেমপ্লেটেও লেখা আছে রক্তদানের স্লোগান “রক্তদিন জীবন বাঁচান” যে ব্যক্তি একজন মানুষের জীবন বাঁচালো সে যেন সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচালো (সুবহানাল্লাহ) সূরা মায়েদা আয়াত-৩২।”
এই স্লোগানটি তিনি মারা যাবার পরে তার কবরের পাশে স্থাপন করার জন্যও বলে রেখেছেন পরিবারের কাছে, ইতি মধ্যে লেখাটি তৈরি করে রেখেছেন বলেও জানান তিনি।
আসাদুল (নানা ভাই) একটি মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রশংসায় ভাসছেন সোস্যাল মিডিয়ায়, আসাদুল হাসানের মত মানবিক কর্মীদের দেখে উজ্জীবিত হবে ভবিষ্যত প্রজন্ম এমনটায় ধারণা সচেতন মহলের।
কিশোরগঞ্জ ব্লাড ফাউন্ডেশন প্রতিষ্টা কালীন সভাপতি ছিলেন আসাদুল হাসান, বর্তমানে “রক্তকমল তরুণ দল” এর উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য ও একজন এডমিন, এছাড়াও বিভিন্ন ব্লাড বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত আছেন, যেখানে ভালো কাজ হয় ডাকলে সেখানেই ছুটে যান।
জানা যায়, আসাদের বাবা ছিলেন ডাক্তার, উনিও ছিলেন মানবিক মানুষ, গরীব রোগীদের বিনা টাকায় চিকিৎসা করতেন ও চেয়ে কখনোও ভিজিট নিতেন না কোনো রোগির কাছ থেকে, যা খুঁশি হয়ে দিতেন তাই নিতেন।
পারিবারিক জীবনে আসাদুল দুই ছেলের জনক তার স্ত্রী তাড়াইলের একটি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা। দুই ছেলে বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরু দয়াল কলেজে বিজ্ঞান ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী, ছোট ছেলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে কিশোরগঞ্জ আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থী।
আসাদুল হাসানের সাথে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, আমি মরনোত্তর চক্ষু দান করার রেজিষ্ট্রেশন করছিলাম, শায়েখ আহমদুল্লাহ হুজুর ও সাইফুল্লাহ হুজুর এর এবিষয়ে বয়ান শুনে জানতে পারলাম, মরনোত্তর চোখ দান বা মৃতব্যাক্তির অঙ্গ দান কোন হাদিসে নাই, পরে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি, উনি (হাফেজ তানভীর) একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আন্তর্জাতিক ক্বারী সৌদি আরব ১ম স্থান সবশেষে মিশরে ৩য় স্থান অর্জন করেন। পরে চিন্তা করলাম আমি উনাকে আমার একটি চোখ উপহার দিবো, উনি যত জনকে কোরআন শিক্ষা দিবেন ধারাবাহিক ভাবে উনার ছাত্ররাও শিক্ষা দিয়ে যাবেন। কেয়ামত পর্যন্ত এবং এর সোয়াব আমি পেতে থাকবো, এই উছিলায় মহান রব আমাকে নাজাতের ব্যবস্থা আশা করি করবেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: মুছলেহ উদ্দিন বলেন, আসাদুল খুবই ভালো মানুষ। সে নিয়মিত রক্তদান করে মানুষের উপকার করে আসছে। এবার সে অন্ধ হাফেজকে নিজের একটি চোখ উপহার দিতে চায়। এমন সাহসী কাজের জন্য আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।
উল্লেখ্য: ২৭ বছর বয়সী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজ তানভীর হোসাইন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাকড়া গ্রামের। ঢাকার যাত্রাবাড়ী দনিয়া কাজলাস্থ শায়েখ নেছার আহমাদ আনছারী পারিচালিত যাত্রাবাড়ী মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার ছাত্র।
তানভীর এর আগে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। মিশরে আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান লাভ করেছেন। রাজধানী কায়রোয় অনুষ্ঠিত বিশ্বের ৫৮টি দেশের ১০৮ জন প্রতিযোগীর মধ্যে পরিপূর্ণ ৩০ পারা হেফজুল কোরআন (তাজভীদ) প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন তানভির হোসাইন।
এর আগে হাফেজ তানভীর বাংলাদেশ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।