কিশোরগঞ্জ

ঈদের আগে খাটিয়া ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা

প্রত্যেক বছর কোরবানি ঈদের সময়ে এসব কাঠের আলাদা কদর দেখা যায়। কোরবানির পশুর মাংস কাটার জন্য সাধারণ মানুষ এসব খাটিয়া ক্রয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে মাংস কাটার খাইট্টা (খাটিয়া) তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছমিলের শ্রমিকরা।

শনিবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছমিল ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, খাটিয়া তৈরি ও বিক্রিতে সময় পার করছেন খাটিয়া বিক্রেতারা।

Image

জানা যায়, গাছের গোড়ার দিকের কাঠ। প্রত্যেকটা গোলাকার। চারপাশটায় গাছের তাজা ছালবাকল। নিচটা সমতল। মাংস কাটার কাজে ব্যবহার করা হয় এ কাঠ। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয়ে থাকে খাটিয়া। এই খাটিয়া সারা বছর ব্যবহার করেন কসাইরা।

খাটিয়া তৈরিতে তেঁতুল গাছের কাঠকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কারণ অন্য কাঠের তুলনায় এ কাঠের দা-ছুরির আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি।

ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত খাটিয়া ব্যবসায়ীরা। উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন তারা। থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন এসব কাঠের খাটিয়া।

সরেজমিনে সুরাটি, হোসেনপুর, হাজীপুরবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে পশুর মাংস কাটার খাটিয়া বিক্রির এমন দৃশ্য নজরে পড়ে।

Image

খাটিয়াগুলো একটির ওপর আরেকটি রাখা। ক্রেতাকে দেখাতে অনেক সময় খাটিয়াগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। পর মুহূর্তেই সেগুলো আবার গুছিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন খাটিয়া বিক্রেতারা। কাঠের তৈরি খাটিয়াগুলো থরে থরে সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ক্রেতা সাধারণের দৃষ্টি কাড়তে একটু পরপরই সেগুলো ঠিকঠাক করেন দোকানিরা।

তবে আগের মত বেচাবিক্রি নেই। সবকিছুতেই প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। সবকিছু সহজে করতে চায় মানুষ। আগে সারা বছরই কমবেশি এসব খাটিয়া বিক্রি হতো। এখন শুধু কোরবানির ঈদ এলেই বিক্রিটা বেড়ে যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

টমটম গাড়ীতে খাটিয়া আনলোড দেখা যায় সুরাটি বাজারের ব্যবসায়ী, বাদল ব্যাপারীসহ একাধিক খাটিয়া ব্যবসায়ীকে তারা  জানান, বংশ পরম্পরায় এ ব্যবসা করে আসছেন তারা। কিন্তু আগের মত খাটিয়ার ব্যবসা নেই। তবে প্রত্যেক কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তারা এ ব্যবসায় নামেন।

Image

কাইয়ুম ব্যাপারী  জানান, কাঠের মধ্যে তেঁতুল গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও মজবুত। প্রত্যেক বছর এ সময়ে বিভিন্ন ‘ছ’ মিল ও মহাজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় যে কাট কোন কাজে লাগে না -এমন সাইজের ছোট ছোট কাঠের গুড়ি ক্রয় করেন। এরপর সেগুলো মাংস কাটার উপযোগী করে নির্দিষ্ট মাপে কেটে খাটিয়া তৈরি করেন। খাটিয়ার ‍ওপরের ও নিচের অংশ সুন্দরভাবে কেটে সমতল করেন।

এসব ব্যবসায়ী জানান, অন্য গাছের খাটিয়া দা বা ছুরির আঘাত তেমন একটা সহ্য করতে পারে না। এতে কাঠ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরো ওঠে মাংসে আটকে যায়। যা পরে মাংস থেকে ছাড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়।

কিন্তু তেঁতুল গাছের কাঠ শক্ত ও মজবুত হওয়ায় সাধারণত এমনটি খুব কম হয়। প্রতি পিস কাঠের তৈরি এসব খাটিয়া ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় বলে যোগ করেন  ব্যবসায়ীরা।

সামিম সরকার, তৌহিদুল ইসলাম সহ একাধিক ক্রেতা জানান, ঈদের নামাজ পড়ে এসে পশু কোরবানি দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। তখন জিনিসপত্র খোঁজাখুঁজি করা বা অন্যের কাছ থেকে নেওয়া অনেকটা বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মাংস কাটার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস খাটিয়া ক্রয় করেন তারা।

Author

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker