নোয়াখালী

সাপের ভয়ে কেউ ঢোকে না স্টেডিয়ামে

অযত্ন-অবহেলায় দেশের অনেক মাঠই এখন খেলার অনুপযোগী। কোনোটিতে খেলাই হয়নি কখনো। পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে এখন একরকম পরিত্যক্ত খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম। ঢাকার এত কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুর এই হাল হলে জেলা শহর বা মফস্বলের স্টেডিয়ামগুলোর কী অবস্থা? এমনই ছয়টি স্টেডিয়াম নিয়ে এই ধারাবাহিক লিখেছেন রাহেনুর ইসলাম। আজ দ্বিতীয় পর্বে থাকছে নোয়াখালীর সেনবাগের বীরবিক্রম শহীদ তারিক উল্যা স্টেডিয়াম।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রাম বিখ্যাত ধান চাষের জন্য। এখানেই ২০০৪ সালে ১০.৩০ একর জমিতে নির্মাণ শুরু হয় ‘সেনবাগ স্টেডিয়াম’। পরে নাম বদলে এটাই হয়েছে ‘বীরবিক্রম শহীদ তারিক উল্যা স্টেডিয়াম’। ২০০৭ সালে উদ্বোধনও হয়েছে স্টেডিয়ামটির। কিন্তু এ পর্যন্তই। এরপর এখানে কোনো খেলা হচ্ছে কি না, স্টেডিয়ামের দেখভাল হচ্ছে কি না, খোঁজ নেয়নি কেউ! তাই স্টেডিয়ামটা এখন বিরানভূমি।

গেট খুলে ভেতরে ঢুঁ মারতে যত দূর চোখ গেল শুধু ঘাস আর ঘাস। মাছ ধরার ভেজা জালও শুকাতে দিয়েছিলেন একজন। স্টেডিয়ামের তত্ত্বাবধায়ক দ্বীন মোহাম্মদ সতর্ক করলেন, ‘একটু সাবধানে পা ফেলবেন। সাপের অনেক উৎপাত এখানে। ভয়ে আসতে চায় না কেউ। উদ্বোধনের পর কেবল দুটি টুর্নামেন্ট হয়েছে এখানে। ২০১৩ সাল থেকে স্টেডিয়ামটা একপ্রকার পরিত্যক্ত।’

আসলে স্টেডিয়াম নির্মাণ হলেও মাঠ তৈরি করেনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের উদ্যোগে মাঠ তৈরি করলেও বর্ষায় চার থেকে পাঁচ মাস পানিতে ডুবে থাকে স্টেডিয়াম। ঘন জঙ্গলে ছেয়ে যাওয়ায় সাপ আর বিষাক্ত কীটপতঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে পুরো মাঠে। পানি নামার পর কোমরসমান ঘাস কেটে মাঠ তৈরি হয় কোনো রকমে। কিন্তু দিন দশেক পর আবারও মাঠ ছেয়ে যায় ঘাসে। এসব নিয়ে সেনবাগ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবুর ক্ষোভ, ‘প্রায় ১১ একর জায়গা ঘিরে দেয়াল দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। এরপর এখানে কয়েক কোটি টাকা খরচে যে একটা স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ভুলে গেছে সেটা। কেন, কী কারণে, কার স্বার্থে সেনবাগে স্টেডিয়াম করা হলো আমার বোধগম্য নয়। স্টেডিয়ামে সবাই মন খুলে খেলবে। অথচ সাপের ভয়ে স্থানীয়রা আসতেই চায় না। আমরা নিজেদের উদ্যোগে রং করিয়েছি। ঘাসও কাটি, কদিন পর আবার ঘাসে ছেয়ে যায় মাঠ। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকে বলতে বলতে আমরা ক্লান্ত!’

ক্ষোভের কারণও আছে সাইফুল ইসলামের। স্টেডিয়াম দেখভালের জন্য যে লোকবল নিয়োগ দেওয়া দরকার সেটা দেয়নি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ বিল, জমি উন্নয়ন করও দেয় না সংস্থাটি। স্টেডিয়ামের হিসাব ঘেঁটে দেখা গেল বিদ্যুতের বিল বকেয়া ৭০ হাজার টাকা। ভূমি কার্যালয়ে বার্ষিক ৫০ হাজার টাকা করে যে উন্নয়ন কর দিতে হয়, সেটার বকেয়া দেড় লাখ টাকা। খেলা বন্ধ হলেও বিল তো আর থেমে নেই। সেনবাগ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের উদ্যোগে নামমাত্র বেতন দেওয়া হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক দ্বীন মোহাম্মদকে। পরিমাণে কম হলেও পরিশোধ করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল ও উন্নয়ন কর।

সেনবাগ স্টেডিয়ামের এই হাল নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানালেন, ‘এই স্টেডিয়াম আমার অধীনে নয়। তার পরও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি হিসেবে আমি ব্যাপারটা দেখব। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদককে আমি খোঁজ নিতে বলছি। স্টেডিয়ামটি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে। অবশ্যই সেখানে নিয়মিত খেলাধুলা হওয়া উচিত।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব পরিমল সিংহের আশ্বাস, ‘নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের উন্নয়নের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেনবাগ স্টেডিয়ামের জন্যও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটা অনুমোদন হয়ে গেলে দ্রুত সেনবাগ স্টেডিয়াম নিয়ে কাজ শুরু করব আমরা।’

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker