কক্সবাজার

কক্সবাজারে ভেসে আসা ট্রলার থেকে হাত-পা বাঁধা ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপকূলে ভেসে আসা একটি ট্রলার থেকে অন্তত ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার দুপুরের দিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস লাশগুলো উদ্ধার করে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নাজমুল হুদা এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মাছ ধরার ওই ট্রলারটি তারা অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় পেয়েছেন। ট্রলারের বরফ রাখার খোলের ভেতর থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। লাশের হাত পা দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পান উদ্ধারকারীরা।

ভেতরে আরও মরদেহ আছে কিনা তা দেখতে এখনও তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

পুলিশের ধারণা এই লাশগুলো অন্তত ১৫-২০ দিন ধরে পানির ভেতরে ছিল। মরদেহগুলো প্রায় গলে, অর্ধ কঙ্কালে রূপ নেয়ায় কারও পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

মি. হুদা বলেন, লাশের যা অবস্থা, ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া পরিচয় জানা সম্ভব না। চেহারাই বোঝা যাচ্ছে না। অনেক দিন ধরেই এই লাশগুলো পানির ভেতরে ছিল বোঝা যাচ্ছে।

তবে নিহতদের পরিচয় শনাক্তে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং ট্রলারে কী ঘটেছে, কোথা থেকে ট্রলারটি ভেসে এসেছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা জানান তিনি।

উপকূলে মাছ ধরার ট্রলার
ছবির উৎস, GETTY IMAGES ছবির ক্যাপশান, উপকূলে মাছ ধরার ট্রলার

মাছ ধরার এই ট্রলারটি সবার আগে চোখে পড়ে কক্সবাজারের স্থানীয় জেলেদের। শনিবার ঈদের দিন সাগরের নাজিরারটেক চ্যানেলের কাছে জোয়ারের সময় তারা ট্রলারটিকে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় ভাসতে দেখেন বলে পুলিশকে জানিয়েছে।

পরে জোয়ারের পানি নেমে ভাটা শুরু হলে তারা ট্রলারটি টেনে নাজিরারটেক পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে আসেন। সেখানে আনার পর ট্রলারের ভেতরে মরদেহ দেখতে পেয়ে তারা পুলিশকে খবর দেয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভেতরে লাশ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও ট্রলারটি পানির ভেতরে বালিয়াড়িতে আটকে থাকায় এবং ট্রলারের বড় অংশ মাছ ধারার জালে পেঁচিয়ে থাকায় তারা উদ্ধার কাজ চালাতে পারছিলেন না।

পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা চান। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উদ্ধার কাজ চালাতে ট্রলারে কয়েকবার ঢোকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এরপর তারা ট্রলার কাটার সরঞ্জাম সংগ্রহ করে ট্রলারটি কেটে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং কোল্ড স্টোরেজ থেকে একের পর এক লাশ উদ্ধার করা হয়।

ট্রলারটি এখনো সাগরে অর্ধ-নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস পানির মধ্যেই উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছেন এবং লাশগুলো নৌকায় করে তীরে আনা হচ্ছে।

কক্সবাজারে স্থানীয়দের মধ্যে মৎস্য পেশাজীবীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
ছবির উৎস,GETTY IMAGES ছবির ক্যাপশান, কক্সবাজারে স্থানীয়দের মধ্যে মৎস্য পেশাজীবীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।

পুলিশ জানায় তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন যে ১৫-১৬ দিন আগে কুতুবদিয়া পয়েন্টে ডাকাতি করতে গিয়ে একদল জলদস্যু জেলেদের হামলার শিকার হয়েছিলেন।

হামলায় জলদস্যুরা মারা পড়েছিল বলে স্থানীয়রা তাদেরকে জানিয়েছেন। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত ট্রলারটির হাদিস পাওয়া যায়নি।

দস্যুবাহিনীর সদস্যরা মহেশখালী চকরিয়া ও বাঁশখালীর বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাদের নিখোঁজের ব্যাপারে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে।

ভেসে আসা বোটটি দস্যুদের বোট কিনা এবং ওই বোটটির নিখোঁজদের স্বজনরা কারও পরিচয় শনাক্ত করতে পারে কিনা পুলিশ সেই অপেক্ষায় আছে।

আবার মাছ ধরার ওই ট্রলারে ডাকাতরা হামলা চালিয়ে লুটপাট করে জেলেদের খুন করতে পারে বলেও পুলিশ ধারণা করছে। আবার ট্রলারে করে মানবপাচারের আশঙ্কাও তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

কক্সবাজার উপকূলে মাছ ধরার ট্রলারে জলদস্যুদের হামলা, লুটপাট, আবার দুই জলদস্যু বাহিনীর মধ্যে কোন্দলের ঘটনা প্রায়শই খবরের শিরোনাম হয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker