কুমিল্লার লালমাই উপজেলার হাজতখোলা বাজারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রচারণার সময় দুই সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক। মুস্তফা কামাল কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
রিটার্নিং কর্মকর্তার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা) সালমা ফেরদৌসকে। কমিটির সদস্য সচিব সিনিয়র সহকারী সচিব ইমদাদুল হক তালুকদার ও সদস্য লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌমিতা দাস।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সালমা ফেরদৌস ঘটনায় সম্পৃক্ত সাংবাদিক এবং অভিযুক্ত অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ারের বক্তব্য শোনেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালমা ফেরদৌস। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আরো আসেন অর্থমন্ত্রীর ভাতিজা লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীন, প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক দৈনিক সংবাদের স্থানীয় প্রতিনিধি মাসুদ রানা ও দৈনিক আমাদের কুমিল্লার স্থানীয় প্রতিনিধি গাজী মামুন।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, তদন্তে দুই পক্ষের কথা শুনেছি। এ বিষয়ে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।
সালমা ফেরদৌস বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি আমাদের তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তাই দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালমা ফেরদৌসের কক্ষে গিয়েছি। আমি বলেছি, তারা (সাংবাদিক) আগে ছাত্রলীগ করত। কখন সাংবাদিক হয়েছে জানি না। ভুল বোঝাবুঝিতে এমনটা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী দৈনিক সংবাদের লালমাই প্রতিনিধি মাসুদ রানা বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমাদের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তদন্ত কমিটি ডেকেছে।
আমরা সেখানে বলেছি, অর্থমন্ত্রীর মেয়ে নাফিসা কামাল সোমবার লালমাই উপজেলার হাজতখোলায় নৌকার প্রচারণায় আসেন। উপজেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাজতখোলা বাজারে যাই। সবাই ভিডিও করছিল। এমন সময় অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই গোলাম সারওয়ার সাহেব এসে কাজী এয়াকুব আলী নিমেল নামে স্থানীয় এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ক্যামেরা নিয়ে নেন আর গাজী মামুন নামের আরেকজন সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ার জন্য ধস্তাধস্তি করেন।
সাংবাদিক গাজী মামুন বলেন, এই ঘটনার পর চেয়ারম্যান সাহেব বলছেন তিনি আমাকে চিনতে পারেননি, তাই এমনটি হয়েছে। আমি পাঁচ বছর সাংবাদিকতা করি। চেয়ারম্যান সাহেবের নিউজ বেশি করেছি। তিনি আমাকে না চেনার কথা নয়।
অর্থমন্ত্রীর মেয়ে নাফিসা কামাল সোমবার লালমাই উপজেলার হাজতখোলায় নৌকার প্রচারণায় আসেন। সাংবাদিকরা প্রচারণার ছবি তোলার সময় লালমাই বার্তার স্টাফ রিপোর্টার কাজী নিমেলের মোবাইল ছিনিয়ে নেন অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এছাড়া দৈনিক আমাদের কুমিল্লার লালমাই প্রতিনিধি গাজী মামুনের মোবাইল ফোন ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি ওই সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সাংবাদিকের এতো ভিডিওর দরকার নাই। সারাক্ষণ খালি ছবি তোলা আর ভিডিও করার কোনো কাজ নাই।’