আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র‍্যাবকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি মানবাধিকার সংস্থার

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে র‍্যাবকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মোট ১২টি মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে।

ডিসেম্বরে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান মোট ছয়জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।

এ বিষয়ে র‍্যাব কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

‘বিষয়টি সম্পর্কে এখনো জানেন না’ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, এই চিঠিটি দুই মাস আগে ২০২১ সালের নভেম্বরের আট তারিখে পাঠানো হয়েছিল, যা আজ (বৃহস্পতিবার) প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কর্মসূচি থেকে এখনো ওই চিঠির ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রেরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামনের সারিতে রয়েছে। ২০২০ সালে বিভিন্ন দেশে শান্তি মিশনে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ, বিভিন্ন বাহিনী থেকে ৬,৭৩১জন সদস্য পাঠানো হয়েছিল।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে, দেশের ভেতরে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে কর্মকর্তাদের পুরষ্কার হিসেবে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হয়, বিশেষ করে র‍্যাব সদস্য যাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং গুমের অভিযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়ের ল্যাকোঁয়ার কাছে দেয়া চিঠিতে আহ্বান জানানো বলা হয়েছে, র‍্যাবে কাজ করেছেন এমন সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শান্তিরক্ষা কর্মসূচি থেকে নিষিদ্ধ করা উচিত।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের র‍্যাব ও এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র

 

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস রয়েছে এমন পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের শান্তিরক্ষী মিশনে নেয়া বন্ধ করার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে এবং যারা কাজ করছেন তাদের নিরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, র‌্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ নথিভুক্ত করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

এর আগে র‍্যাব সদস্যদের নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা।

রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি বলেছেন, “জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার ব্যাপারে যদি সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেসের সদিচ্ছা থাকে, তাহলে তিনি নিশ্চিত করবেন যে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মতো নির্যাতনের প্রমাণিত রেকর্ড রয়েছে এমন কোন সংস্থাকে কোন দেশে মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকা হবে।”

চিঠিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর র‍্যাবের ভেতরে সংস্কারের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার বদলে, বাংলাদেশ সরকার ‘অভিযোগ অস্বীকার’ করছে এবং মানবাধিকার কর্মী ও ভুক্তভোগী পরিবারের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের বাড়িতে হাজির হয়ে পুলিশ তাদের হুমকি দিচ্ছে।

সেই সাথে মিথ্যা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছে যেখানে লেখা থাকছে তাদের পরিবারের সদস্য নিখোঁজ হয়নি এবং তারা (পরিবার) ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পদক্ষেপ হিসেবে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker