সারা দেশে অনুমোদনবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধের অভিযান চলছে। গত দুই দিনে, যশোরে ৪ ক্লিনিক সিলগালা, ৪টিকে জরিমানা, খুলনায় ২ প্রতিষ্ঠানকে দেড়লাখ টাকা জরিমানা, চাঁদপুরে হাসপাতাল সিলগালা ও নারায়ণগঞ্জে ১১ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে বন্ধের অভিযান চলছে তবে এখন পর্যন্ত কতগুলো অবৈধ প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে তার সুনিদিষ্ট কোন তথ্য নেই অধিদপ্তরের কাছে।
মঈনুল আহসান বলেন, ‘যেহেতু হাইকোর্ট আমাদের সাতদিন সময় দিয়েছে আমরা আপাতত তথ্য সংগ্রহ করছি। এরপরে আমরা স্বমন্বিত তথ্য আমরা দিব।’
যশোরে ৪ ক্লিনিক সিলগালা, ৪টিকে জরিমানা
যশোরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহযোগিতায় আটটি বেসরকারি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এরমধ্যে চারটি ক্লিনিক সিলগালা ও অন্য চারটিকে জরিমানা করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর শহরের পালবাড়ি মোড়, ঘোপ সেন্ট্রাল রোড, দড়াটানা এলাকা এবং ঝিকরগাছায় এ অভিযান চালানো হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাবিদ হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এর আগে বুধবারও ঝিকরগাছায় দুটি ক্লিনিক সালমা মেডিকেল সেন্টার ও সালেহা ক্লিনিক সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদ জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার যশোর শহরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে পালবাড়ী এলাকার হাসিনা ক্লিনিকের লাইসেন্স না পাওয়ায় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এছাড়া একই অভিযোগে ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকার আধুনিক হাসপাতালকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও সিলগালা, এবং ল্যাবজোন ক্লিনিক ও পপুলার হাসপাতালকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নোয়াখালীতে ১৫ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা
নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে ১৫টি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দন্ত চিকিৎসালয় সিলগালা করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে দিনভর সদর ও সোনাইমুড়ি উপজেলায় এ অভিযান চালানো হয়।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার সদর উপজেলায় ১৩টি এবং সোনাইমুড়ী উপজেলায় দুটি অবৈধ ক্লিনিক বন্ধ করে সিলগালা করে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১১০টি হাসপাতাল ও ২০৮টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বাইরে লাইসেন্স বিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চাঁদপুরে হাসপাতাল সিলগালা, লাখ টাকা জরিমানা
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও সনদ নবায়ন না করায় একটি বেসরকারি হাসপাতাল সিলগালা করে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার মেহের কালিবাড়ী এলাকায় বেসরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘উপজেলার সব জায়গায় নিয়মিত অভিযান চলবে এবং ক্রটিযুক্ত, অনিয়ম ও অনুমোদনহীন সকল প্রকার ল্যাব, ক্লিনিক এবং বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দীন বলেন, ‘মানহীন স্বাস্থ্যসেবা, মেয়াদ উত্তীর্ণ রিএজেন্ট দিয়ে প্যাথলজি পরিচালনা, নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন অপারেশন রুম এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন করা সনদ নবায়ন না থাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ওই হাসপাতালটি সিলগালা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।’
নারায়ণগঞ্জে ১১ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ
নারায়ণগঞ্জের মোট ১১টি হাসপাতাল-ক্লিনিকে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। গত বুধবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনা এসেছে। সারা জেলার মোট ২০০টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে ১১টির হালনাগাদ করা হয়নি। আমরা তাদের বন্ধের নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া আমাদের তালিকার বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান আছে কিনা সেই বিষয়ে অভিযান চালাচ্ছি।’
খুলনায় দুই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা
গত বুধবার দুপুরে নগরীর মোহাম্মাদনগর ও গল্লামারী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করে র্যাব-৬।
খুলনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘নগরের গল্লামারী এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে বিভিন্ন অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় ছফুরা ক্লিনিকের মালিক মো. জিয়াউর রহমানকে চিকিত্সা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম করায় ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং মোহাম্মাদনগর হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মিসেস নুরুননাহারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তারা জরিমানার অর্থ তাত্ক্ষণিক জমা দেন। এসব অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।’
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.