জয়পুরহাট

‘লাবিব দেখতে সুন্দর হওয়ায় তার বুকে অস্ত্র চালাতে পারছিলাম না’

পারিবারিক কলহের জের ও সম্পত্তির লোভে ৪ বছরের শিশু দেবর লাবিবকে গলাটিপে হত্যা করার কথা স্বিকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবিন্দ দিয়েছে ভাবী রিমা খাতুন। বৃহষ্পতিবার জয়পুরহাটের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট নিশিথ রঞ্জন বিশ্বাস ১৬৪ ধারায় আসামী রিমা খাতুনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র দেব জানান, গত মঙ্গলবার জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাতনা গ্রামে শিশু দেবর লাবিব (৪) কে হত্যার অভিযোগে পুলিশ ভাবী রিমা খাতুন (১৮) কে গ্রেফতার করে। বৃহষ্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে রিমা খাতুন আদালতে স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তি মূলক জবানবিন্দ প্রদান করেন।

রিমা খাতুন আদালতকে জানায়, বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় শ্বাশুড়ীর সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। এ জন্য পারিবারিক অশান্তির কারনে স্বামী মেস্তাউলকে নিয়ে আলাদাভাবে বসবাস করতো রিমা। পারিবারিক কলহের কারনে মনের মধ্যে একটা প্রতিশোধ নেওয়ার বাসনা তৈরি হয়। এরপরে দেবরকে হত্যা করতে পারলে সম্পত্তির ভাগ তার স্বামী একাই পাবে এই লোভও কাজ করে। সব মিলে ক্ষোভের মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানোর কথা বলে শিশু দেবর লাবিবকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গলাটিপে হত্যা করে বলে আদালতকে জানায় রিমা খাতুন। আদালত রিমা খাতুনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জেলা আধুনিক হাসপাতালে শিশু লাবিবের ময়না তদন্ত শেষে পিতার নিকট মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। হাসপাতালের ময়না তদন্ত কাজে সহযোগি ডোম আব্দুল মান্নান জানান, শিশু লাবিব দেখতে সুন্দর হওয়ায় তার বুকে অস্ত্র চালাতে পারছিলাম না। এ সময় নিজের সন্তানের কথা মনে হওয়ায় অনেকক্ষন ধরে কাঁদতে হয়েছে বলে জানান ডোম আব্দুল মান্নান। এটি তার চাকরী জীবনের উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় ঘটনা, এক পর্যায়ে ডোমের চাকরী ছেড়ে দেওয়ার মতো মানসিকতাও কাজ করছিলো বলে জানান তিনি।

সাতনা গ্রামের পিতা জাহের আলীর দুই ছেলে। মেস্তাউল (২২) ও আব্দুল্লাহ লাবিব (৪)। মেস্তাউলের স্ত্রী রিমা খাতুন বিয়ের পর থেকে প্রায় শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়া বিবাদে লেগে থাকতো। ফলে বাধ্য হয়ে জাহের আলী তার বড় ছেলে মেস্তাউলকে বাড়ির পাশে আলাদা স্থানে বাড়ি করে দেন। মঙ্গলবার সকালে জাহের আলী তার বড় ছেলে মেস্তাউলকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে ধান কাটার জন্য যায়। এই সুযোগে পূর্ব পরিকল্পনায় অনুযায়ী ভাবী রিমা খাতুন একমাত্র দেবরকে মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ানোর কথা বলে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসে। ভাত খাওয়ার পরে রিমা খাতুন গলাটিপে লাবিবকে হত্যার পর নিজ ঘরের ভিতর লেপ দিয়ে ঢেকে রাখে। পরে রিমার শ্বাশুড়ী তার শিশু ছেলে লাবিবকে নিয়ে আনার জন্য বড় ছেলে মেস্তাউলের বাড়িতে আসে। শিশু লাবিবকে খুজতে থাকে তার মা।

এক পর্যায়ে লাবিবের লাশ ঘরের ভিতর দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে আসে এবং লাবিবের মরদেহ উদ্ধার করে। রিমা খাতুন দেবর লাবিবকে হত্যার কথা স্বিকার করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ছোট ছেলে লাবিবের হত্যা কান্ডের ঘটনায় রিমা খাতুনকে আসামী করে হত্যা মামলা করেছে পিতা জাহের আলী।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker