টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলে জোকারচর সেতু নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে

✑ আব্দুস সাত্তার, বিশেষ প্রতিনিধি:

টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা সড়কের উত্তরাংশে নিউ ধলেশ্বরী নদীর উপর কালিহাতী উপজেলার জোকারচরে অবশেষে সেতু নির্মিত হচ্ছে। দীর্ঘ সময় স্থগিত থাকার পর সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। পুনরায় সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয়দের মুখে হাসি ফুটেছে। আগামী সেপ্টেম্বর/ ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পশ্চিমে চরাঞ্চলের মাহমুদ নগরের গোল চত্ত¡র থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে মহাসড়ক পর্যন্ত সড়কটি শেখ হাসিনা সড়ক নামে পরিচিত। ওই সড়কের উত্তরাংশে নিউ ধলেশ্বরী নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কালিহাতী উপজেলার জোকারচর নামক স্থানে ৩৪ কোটি ১৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮০.৩৮ টাকায় ২৬৪ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দরপত্র আহ্বান করে। যথারীতি হায়দার কন্সট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড, অবনী এন্টারপ্রাইজ ও সৈয়দ মজিবুর রহমান নামক তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জয়েন্টভেঞ্চারে ৩৪ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৯ টাকা চুক্তিমূল্যে সেতু নির্মাণের কাজ পায়। তারা ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) পেয়েও অজ্ঞাত কারণে সেতু নির্মাণে গড়িমসি করতে থাকে। পরে ২০২২ সালে জোকারচরে সামান্য কিছু মালামাল এনে সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

Image

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমান খান সোহেল হাজারি ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করার পরপরই তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অথচ চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। এরপর বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাজারে সেতু নির্মাণের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্পটি মুখ থুবরে পড়ে।

সেতুটি যথাসময়ে নির্মাণের লক্ষে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও কোন সুফল আসেনি। পরে এলজিইডি টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সেতু নির্মাণে রাজি করান। কিন্তু সেতুর দক্ষিণপাশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও মালিক পক্ষ টাকা বুঝে না পাওয়ায় জমি ছেড়ে না দেওয়ায় ওই অংশের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

জোকারচর গ্রামের আ: হাই, সুলতান ফকির, মো: শহিদুল ইসলাম, লাল মিয়া, ইউনুস শেখ, নজরুল ইসলাম, গৃহবধূ নাছিমা আক্তার, হাজেরা সুলতানা, মোছা: আম্বিয়া খাতুন, লাভলী আক্তার সহ অনেকেই জানান, সেতুটি নির্মিত হলে টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের মানুষ সহজেই শেখ হাসিনা সড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প পথ তৈরি হবে। এতে প্রতি ঈদে মহাসড়কে যাজটও হবেনা। তারা সেতুটির নির্মাণ তাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অবনী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধীকারী মো: হেকমত আলী জানান, নিউ ধলেশ্বরী ও তার দক্ষিণ পাশে সেতুর আরও ১২টি পাইল বাকি রয়েছে। ওই জমি সরকার অধিগ্রহন করলেও মালিক টাকা বুঝে পায়নি। তাই তিনি জমি ছেড়ে দিচ্ছেন না। তবে তাকে নিয়ে বার বার বৈঠক করা হচ্ছে। তিনি জমি ছেড়ে দিলে নদী ব্যতিত সকল কাজ শেষ করে রাখা যাবে।

ওই সেতুর নির্মাণ কাজ দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কালিহাতী এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: মিন্টু মিয়া জানান, নানা কারণে সেতু নির্মাণে একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুনরায় কাজ শুরু করার পর খুব দ্রুত এগুচ্ছে। এ পর্যন্ত সেতুর ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কাজের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামি অর্থ-বছরে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলাম জানান,সেতুটি নিয়ে তারা খুব টেনশনে ছিলেন। একদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিত কারণে মালামালের দাম বেশি। অন্যদিকে অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব তাদের চিন্তিত করে ফেলেছিল। সকল পক্ষের সঙ্গে বার বার বৈঠক করার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে এবং খুব দ্রতগতিতে এগিয়ে চলছে। আগামি ১২ সেপ্টেম্বর না হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker