লেখক: মো.আবু বক্কর সিদ্দিক নোমানী।
আখিরাত শব্দের অর্থ, পরকাল,পরলোক,শেষফল, শেষ পরিনতি।( মুজামুল ওয়াফী)
মৃত্যুর পর থেকে মানুষের যে অনন্ত জীবন শুরু হয় তাকে আখিরাত বলে। পার্থিব জীবন সীমাবদ্ধ ; তা একদিন ফুরিয়ে যাবে,সীমাবদ্ধ জীবনের সকল হিসাব দিতে হবে এবং কারো প্রতি জুলুম করা হবে না।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
یَوۡمَئِذٍ یَّصۡدُرُ النَّاسُ اَشۡتَاتًا ۬ۙ لِّیُرَوۡا اَعۡمَالَہُمۡ ؕ﴿۶﴾
অর্থাৎ সেদিন মানুষ দলে দলে বিভক্ত হয়ে বেড়িয়ে আসবে এবং তাদের সকল কৃতকর্ম দেখানো হবে।
পরের আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন,
فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَہٗ ؕ﴿۷﴾
অর্থাৎ কেউ অনু পরিমান সৎ কাজ করলে সে তা দেখতে পাবে।
তিনি আরো বলেন,
وَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَہٗ ٪﴿۸﴾
অর্থাৎ কেউ অনু পরিমান অসৎ কাজ করলেও সে তা দেখতে পারবে।
সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম দুনিয়ার জীবন অতি নগন্য, ক্ষনস্থায়ী ও চাকচক্যময় কিন্তু তার সৌন্দর্য অল্পতেই শেষ হয়ে যায়।
অপরদিকে আখিরাত মুমিনের চিরস্থায়ী ঠিকানা এবং আখিরাতের সৌন্দর্য ও চিরস্থায়ী।
সুতরাং যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহ ও মুহাম্মাদ সা: আনীত দ্বীনের উপর অটল থেকে আমল করবে, সে চিরস্থায়ী ঠিকানা তথা আখিরাতে চিরসুখ-ময় স্থান জান্নাতে থাকবে।
আর যদি ক্ষনস্থায়ী ঠিকানা দুনিয়াতে শয়তানের দেখনো পথে অতিবাহিত করে তাহলে চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে যাবে। (আসতাগফিরুল্লাহ).
দুনিয়ার এ নগন্য জীবনকে আল্লাহ তায়ালা ক্রীড়া-কৌতুকের জীবন বলেছেন।
আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন,
اِعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا لَعِبٌ وَّلَہۡوٌ وَّزِیۡنَۃٌ وَّتَفَاخُرٌۢ بَیۡنَکُمۡ وَتَکَاثُرٌ فِی الۡاَمۡوَالِ وَالۡاَوۡلَادِ ؕ کَمَثَلِ غَیۡثٍ اَعۡجَبَ الۡکُفَّارَ نَبَاتُہٗ ثُمَّ یَہِیۡجُ فَتَرٰىہُ مُصۡفَرًّا ثُمَّ یَکُوۡنُ حُطَامًا ؕ وَفِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ شَدِیۡدٌ ۙ وَّمَغۡفِرَۃٌ مِّنَ اللّٰہِ وَرِضۡوَانٌ ؕ وَمَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ
۟(সূরা হাদীদ, আয়াত:২০)
তোমরা জেনে রেখ, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার আর ধন-মাল ও সন্তানাদিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র। তার উদাহরণ হল বৃষ্টি, আর তা হতে উৎপন্ন শষ্যাদি কৃষকের মনকে আনন্দে ভরে দেয়, তারপর তা পেকে যায়, তখন তুমি তাকে হলুদ বর্ণ দেখতে পাও, পরে তা খড় ভুষি হয়ে যায়। (আর আখেরাতের চিত্র অন্যরকম, পাপাচারীদের জন্য), আখেরাতে আছে কঠিন শাস্তি, (আর নেককারদের জন্য আছে) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোঁকার বস্তু ছাড়া আর কিছুই না।
দুনিয়ার জীবনের উপমা হচ্ছে ফসলের মতো। যা বৃষ্টির কারনে সবুজ-শ্যামল ও দৃষ্টি নন্দন হয়, কিন্তু বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেলে তা আবার শুকিয়ে যায় ; তখন আর ঐ ফসলের সজীবতা থাকেনা। বরং তার পরনতি হয়ে যায় শুষ্ক ও খড়-কুটোয়। দুনিয়াতে মানুষের উদাহরনটা তেমনি। যেখানে ব্যস্ততা ও পরিবর্তনের হিসাব লেগে থাকে। এবং মূল্যহীন হয়ে পড়লে মানুষের জীবনও অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন আর মানুষের মূল্যও কেউ দেয়না।
সুতরাং আমাদের ঐ দিবসের প্রতি উৎসাহিত হওয়া উচিত যেটা অপরিবর্তিত, চিরস্থায়ী, যেখানে মানুষ কখনো বৃদ্ধ হবেনা।
(তাফসীরে তাবারী ১৮/৩০)
লেখক পরিচিতি:নামঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আবু বকর সিদ্দিক নোমানী, ইমাম ও খতীবঃ চর বিশ্বনাথপুর বাইতুন্ নুর জামে মসজিদ। প্রতিষ্টাতা পরিচালকঃ ইসলাহুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন
সিনিয়র শিক্ষকঃ আশরাফুল উলুম কওমী মাদরাসা।