সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাসমাবেশে বিপুলসংখ্যক লোক জড়ো করতে চায় বিএনপি। এরপর সরকার পতনের দাবিতে রাজধানীকেন্দ্রিক টানা কর্মসূচিতে থাকতে চায় দলটি। তাই মহাসমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকায় রেখে দিতে চায় তারা। এমন ভাবনা নিয়ে বিএনপি তাদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মনে করছেন রাজধানীতে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতাকর্মীরা পথে পথে বাধা দিতে পারেন। এ জন্য কর্মসূচির অন্তত দুই দিন আগে দূরের জেলার নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে বলা হচ্ছে। দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপি দ্রুত আন্দোলন জমাতে চায়। তাই অনেকটা হঠাৎ ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছে।
অতীতে ঢাকায় যত মহাসমাবেশ হয়েছে তার আগে সরকারি বাধার কারণে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করেও রাজনীতিতে উত্তাপ তৈরি হয়েছিল।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসমাবেশ থেকে কী কর্মসূচি দেওয়া হবে তা নিয়ে নানা পর্যালোচনা হচ্ছে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিয়ে কয়েক দিন বড় কর্মসূচি করতে পারলে সরকার, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের আপাত স্বাভাবিক অবস্থা থাকবে না। বিশেষ করে প্রশাসনে আন্দোলন-ভীতি তৈরি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আস্থা বাড়বে।
কূটনীতিক পর্যায়ে যোগাযোগ আছে এমন একজন নেতা বলেন, বিএনপির আন্দোলন নিয়ে পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে বেশ আগ্রহ আছে। গত ১৪ বছরে পশ্চিমাদের এমন আগ্রহ দেখা যায়নি। সে জন্য ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের শক্তি দেখাতে চায়।
বিএনপি নেতাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে মাঠ কর্মসূচি দেওয়াকে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। কিন্তু গত কয়েক মাসে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সেই কৌশল তেমন সফল হয়নি। কারণ বিএনপির সব কর্মসূচি সফল হয়েছে। সেভাবে বাধা আসেনি। বাধা এলে প্রতিরোধও হয়েছে। ভিসানীতি চালু হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এবারের আন্দোলনে সরকার বাধা দিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। আর বাধা না দিলে বিএনপির আন্দোলন ‘গণ-অভ্যুত্থানের’ পথে এগোবে।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসমাবেশ হচ্ছে চূড়ান্ত আন্দোলনের একটি প্রতীক। এই মহাসমাবেশে এক দফার প্রতি মানুষের সমর্থন নিয়ে আরো শক্তভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। বিএনপি মনে করে, সরকার জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন করবে—এমন কথা মুখে বললেও তাদের পরিকল্পনা ভিন্ন। সংসদের মেয়াদের শেষ তিন মাসের প্রথমেই নির্বাচন করতে চায় সরকার। স্কুল-কলেজের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিলের সঙ্গে বিষয়টির যোগসাজশ খুঁজে পাচ্ছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার নিজেদের মতো নির্বাচন করতে বিভিন্ন ফন্দি আঁটছে। আমরাও সরকার পতনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছি। মহাসমাবেশ থেকেও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়া হবে। তার ধারাবাহিকতায় একদিন মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের পতন ঘটাবে।’
তবে ২৭ জুলাই মহাসমাবেশের জন্য বিএনপি গতকাল পর্যন্ত কোনো স্থানের অনুমতি চায়নি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানান, আজ সোমবার সকাল ১১টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর অনুমতি চাওয়া হতে পারে।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি সমাবেশের বিষয়ে আবেদন করেনি। আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে অনুমতির বিষয়টি চিন্তা করা হবে।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.