জাতীয়

‘জিম্মি ৩৩ দিন মনে হয়েছে ৩৩ বছর, আজ মনে হচ্ছে ঈদ’

‘৩৩ দিন ৩৩ বছর মনে হয়েছে। প্রতিটি দিন ছিল কষ্টের। এবার ঈদের আনন্দ ছিল না। ঈদের দিন ঈদ মনে হয়নি।

এখন দেশে আসার পর ঈদের আনন্দ মনে হচ্ছে।’ সোমালিয়া জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাস পর আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি-১ জেটিতে নামার পর এসব কথা বলেছিলেন এমভি আবদুল্লাহ নাবিক মো. শামসুদ্দিন।

এর আগে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে একই জাহাজ মালিকের এমভি জাহানমণি-৩ নামে একটি লাইটারেজ জাহাজ চট্টগ্রাম আসে। এরপর বিকেল ৪টা ১৬ মিনিট নাগাদ এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ ২৩ নাবিক বহনকারী এমভি জাহানমণি-৩।

প্রথমে জাহাজের ক্যাপ্টেন মো. আবদুর রশিদ। এরপর একে একে অপর ২২ নাবিক জাহাজটি থেকে নেমে এসেই স্বজনদের জড়িয়ে ধরেন।

চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান জাহাজ থেকে নেমেই তার দুই শিশু সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ নিবর ছিলেন। আর সন্তানদের আদর করেন।

সন্তানরাও দীর্ঘদিন পর বাবাকে পেয়ে চোখ-মুখের দিকে তাকাচ্ছেন। এ সময় জিম্মিদশার কথা বলতে গিয়ে আতিক উল্লাখ খান বলেন, ‘এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। আমার দুই মেয়ে এখানে এসেছে। আরেক সন্তান আমার জন্য ঘরে অপেক্ষা করছে। এদের জন্য তো আমার সবকিছু।

এর আগে জাহাজ থেকে নামার পথে দুইপাশে স্বজন, উৎসুক লোকজনসহ অনেকেই নাবিকদের এক নজর দেখতে ভিড় জমান। ৪টা ১৬ মিনিটে ক্যাপ্টেন জাহাজ থেকে বন্দর জেটিতে নামার সময় নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করে বলেন, আমরা সবাই আজ অনেক অনেক খুশি। আনন্দ লাগছে। আমরা দেশবাসীর প্রতি কৃর্তজ্ঞ।

এ সময় ক্যাপ্টেনের পেছনে থাকা নাবিক তানভির আহমেদ বলেন, আমাদেরকে শারিরীকভাবে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তবে বন্দুকের নলের নিচে থাকতে হয়েছে। প্রতিটি দিন খুব কষ্টের ছিল।
  
সোমালি জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাসের মাথায় গতকাল সোমবার দেশে ফিরে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জাহাজটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করে। সেখান থেকে আজ সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটে একটি লাইটার জাহাজে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দেয় ২৩ নাবিক। অবশেষে সকল প্রতীক্ষার প্রহর শেষে বিকেল ৪টার দিকে জাহাজটি বন্দরে আসে। সেখান থেকে এনসিটি-১ জেটিতে ভিড়ে ৪টা ১৬ মিনিটে। 

৩৫৪৬৫

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে গত ৪ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল। ১৯ মার্চ জাহাজটি এসব পণ্য নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এদিকে মাপুতু বন্দর থেকে রওনা হওয়ার চার দিন পর গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।

এরপর দীর্ঘ ৩৩ দিনের জিম্মিদশা থেকে গত ১৩ এপ্রিল ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার আট দিনের মাথায় গত ২১ এপ্রিল নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ দুবাই পৌঁছে। জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহিনোঙর থেকে ওই বন্দরের জেটিতে ভিড়ে ২২ এপ্রিল। এরপর ওই বন্দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাসের পর নতুন ট্রিপের পণ্য (চুনা পাথর) লোড করতে পার্শ্ববর্তী ইউএইর মিনা সাকার বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় জাহাজটি। সেখানে ৫৬ হাজার টন চুনা পাথর নিয়ে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ গত ৩০ এপ্রিল দুবাই মিনা সাকার বন্দর থেকে দেশের পথে রওনা হয়। অবশেষে সেই জাহাজটি গতকাল দুপুরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker