আন্তর্জাতিকতথ্য ও প্রযুক্তি

যেভাবে সৌদি নারীর ফোন হ্যাক করল ইসরায়েলি কোম্পানি

সৌদি নারীর ফোন হ্যাক করে ধরা পড়েছিল ইসরায়েলি কোম্পানি সেই এনএসও। অথচ কোম্পানিটি বিশ্বের প্রভাবশালী সব রাজনীতিবিদ, ধনকুবের, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে হস্তগত করেছিল তা এত দিন অজানাই ছিল। এতেই ইসরাইলের প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক স্পাইওয়্যার নির্মাতা হিসাবে ‘কুখ্যাতি’ পেয়েছে। এর মূলেই ছিল এনএসও’র স্পাইওয়্যারে একটি ভুল।

এসবের পেছনে রয়েছে সৌদি এক নারী। সৌদি অধিকারকর্মী লুজাইন আল-হাথলুল। ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নজরদারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পেছনে রয়েছেন তিনি। এমনটা জানিয়েছে রয়টার্স।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলার অভিযোগে কারাবাসে থাকা হাথলুল ২০২১ সালে মুক্তি পান। এর পরপরই তিনি গুগল থেকে সতর্কতামূলক ইমেইল পান। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় সমর্থনপ্রাপ্ত হ্যাকররা তার জি-মেইল অ্যাকাউন্টে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে।

ই-মেইল পেয়ে আতঙ্কিত হাথলুল ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার নিয়ে কাজ করা কানাডীয় গোষ্ঠী সিটিজেন ল্যাবকে অনুরোধ জানান, তারা যেন হাথলুলের আইফোনের সুরক্ষা খতিয়ে দেখে। সিটিজেন ল্যাবের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব কিছুর শুরুটা হয়েছিল ওই সৌদি অধিকারকর্মীর আইফোনের ছোট একটি ‘গ্লিচ’ থেকে। ভুলটা অবশ্য করেছিল এনএসও’র স্পাইওয়্যারই। সৌদি অধিকারকর্মী লুজাইন আল-হাথলুলের আইফোনে একটি ভুয়া ছবি ভুলে রেখে গিয়েছিল এনএসও গ্রুপের স্পাইওয়্যার। সে ছবির সূত্র ধরেই ফোন হ্যাকিংয়ের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছিলেন হাথলুল ও প্রাইভেসি গবেষকরা; প্রমাণ মিলেছিল হ্যাকিংয়ে এনএসও গ্রুপের সক্রিয় ভূমিকার।

যা ঘটেছিল : সৌদি আরবের সবচেয়ে সুপরিচিত অধিকারকর্মীদের একজন আল-হাথলুল, দেশের নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে প্রতিবাদ-প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল খেটেছেন আল-হাথলুল।

সিটিজেন ল্যাবের গবেষক বিল মার্কজাক ছয় মাস ধরে তার ফোনের রেকর্ড ঘেঁটে অপ্রত্যাশিত এক আবিষ্কার করেন। নজরদারি সফটওয়্যারটির নিজস্ব ব্যবস্থায় এক ত্রুটির কারণে একটি ইমেজ ফাইলের কপি রয়ে গিয়েছিল ফোনে, লক্ষ্যবস্তুর মেসেজ চুরি করার পর নিজেকে মুছে দিতে পারেনি ওই ম্যালওয়্যার ফাইলটি।

মার্কজাকের মতে, সাইবার হামলার পর রয়ে যাওয়া কম্পিউটার কোড থেকেই নজরদারি সফটওয়্যারটির সঙ্গে এনএসও গ্রুপের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। ‘এটা গেম চেঞ্জার ছিল,’ বলেন মার্কজাক। সিটিজেন ল্যাব এবং আল-হাথলুলের আবিষ্কারের ভিত্তিতেই ২০২১ সালের নভেম্বরে এনএসও গ্রপের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে অ্যাপল।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker