শিক্ষা

‘চোখ বন্ধ করে নিপুনকে দেখতে পাই, সে কাকে দোষ দেবে?’

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও নিপুনের ভর্তি না হতে পারা নিয়ে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। নেটাগরিকদের অনেকেই প্রতিবাদও জানাচ্ছিলেন। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর পক্ষে মুখ খুলেছেন তারকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ভর্তি হতে পারছেন না নিপুন বিশ্বাস। নিপুন দরিদ্র ঘরের সন্তান। তার বাবা নাপিতের কাজ করে বহু কষ্টে সংসার চালান। ফলে নিপুনের কোনো স্মার্ট ফোন নেই। স্মার্ট ফোন এবং নেট কানেকশন না থাকাতে তার পক্ষে বারবার ওয়েবসাইটে ঢুকে জানা সম্ভব হচ্ছিল না সে টিকেছে নাকি টিকে নাই। নিয়ম ছিল কর্তৃপক্ষ মেসেজ দিয়ে জানাবে। কিন্তু তার মোবাইলে মেসেজও আসে নাই। যেদিন ভর্তি হওয়ার শেষ তারিখ ছিল তার আগের দিন সে কারও একজনের কাছে জানতে পারে সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারপরই দ্রুত টাকা জোগাড় করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হয় সে। যেহেতু ওটা ছিল শেষ দিন, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই মারফত ফোন করে ডিনকে জানায়, সে পথে আছে। যাই হোক তার পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তি করতে অপারগতা জানায়।

এই পর্যন্ত পড়ে আমি চোখ বন্ধ করে নিপুনকে দেখতে পাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের বাইরে জীর্ন স্যান্ডেল পায়ে নিপুন দাঁড়িয়ে। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। তার গলা আটকে আটকে আসছে। সে বুঝতে পারছে না, সে কাকে দোষ দেবে? তার মোবাইল না থাকাকে? মেসেজ না আসাকে? পথে দেরি হওয়াকে? নাকি তার দরিদ্র পিতাকে?

আচ্ছা কবে থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলা এতো নিষ্ঠুর হয়ে উঠল? কবে থেকে শিক্ষকেরা হয়ে উঠল এ রকম বেরহম? আমি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি নাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকের নিবিড় সান্নিধ্য পেয়েছি। আমি তো দেখেছি তারা ছাত্রদের বিপদে আপদে কীভাবে পাশে দাঁড়ান। আইনকে ছাত্রের পথের কাঁটা না করে, আইনের হাত মচকে দিয়ে ছাত্রের জন্য রাস্তা বানান। সেই সব শিক্ষকদের দিন কি তবে শেষ? আমরা তবে কাদের শিক্ষক বানাচ্ছি? কি শিক্ষা দেবেন তারা আমাদের?

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখনও সময় শেষ হয়ে যায় নাই প্রমাণ করার যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হৃদয়ও থাকা লাগে।’

Mission 90
নিপুন বিশ্বাস

প্রসঙ্গত, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড: মো: আনোয়ার হোসেনের বিশেষ নির্দেশে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান (পিইএসএস) বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন নিপুন বিশ্বাস। মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ অর্ণব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে একই দিন বিকেলে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড: মো: আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির জরুরি সভায় নিপুনের ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মানবিক দিক ও নিপুনের পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে তার ভর্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আজ বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সব প্রক্রিয়া শেষ করে নিপুনের ভর্তি নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুষদ।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker