গত ১৩ এপ্রিল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে বাবার কোলে থাকা অবস্থায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় চার বছরের শিশু তাসকিয়া আক্তার জান্নাত। তাকে হত্যা করতে সন্ত্রাসী রিমন যে আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করেছিল তা ঘটনার তিনদিন আগে ২১ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার (২০ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে র্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, তাসকিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিমন (২৩) ও তার সহযোগী সোহেল উদ্দিন (২৪), সুজন (২৬), নাইমুল ইসলাম (২১) এবং আকবর হোসেনর (২৬) অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার রাতে জেলার সুবর্ণচরের চরক্লার্কে অভিযান চালায় র্যাবের একটি দল। এসময় ওই সন্ত্রাসীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দুই রাউন্ড গুলি ছুঁড়লে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা পিছু হটার চেষ্টা করলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে গোলাবারুদ, একটি পিস্তল, একটি পাইপগান ও ছয় রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে তাসকিয়াকে নিয়ে বাড়ির পাশ্ববর্তী মালেকার বাপের দোকান এলাকার বন্ধু স্টোরে যান আবু জাহের। ওই দোকানে গিয়ে তাসকিয়ার জন্য চকলেট, জুস ও চিপস নিয়ে থেকে বের হওয়ার সময় মহিন, রিমন, আকবর, নাঈমের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী মামুনের দোকানে এসে গালিগালাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে পাশে থাকা গ্যাসের সিলিন্ডারে লেগে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
পরে তারা দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা পিছন থেকে তাদের লক্ষ্য করে প্রথমে ইট নিক্ষেপ করলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাসকিয়া পরে তারা বাড়ি যাওয়ার সময় পিছন থেকে আরও দুই রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে তাসকিয়া ও জাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। পরে গুলিবিদ্ধ তাসকিয়া ও আবু জাহেরকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয় লোকজন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা নেওয়ার পথে কুমিল্লায় পৌঁছলে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা নানীর কোলে মারা যায় তাসকিয়া।
মাটি কাটার জের ধরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের সাথে কোনোভাবেই সংপৃক্ততা ছিলো না মাওলনা আবু জাহের বা তার মেয়ে তাসকিয়ার।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে তাসকিয়া হত্যার ঘটনায় তার খালু (খালার স্বামী) হুমায়ুন কবির বাদি হয়ে রিমন, বাদশা মহিন’সহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ্য ও অজ্ঞাত নামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় এ পর্যন্ত ৯ জন এজাহারভুক্ত আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ও পুালশ।