আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানকে জবাব দিতে চাপের মুখে মোদি?

নরেন্দ্র মোদি ও শেহবাজ শরিফ।

বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে প্রাণঘাতী হামলার পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।নয়াদিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি। তবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সেনাবাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ অভিযানিক স্বাধীনতা’ দিয়েছেন জবাব দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে হামলার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি ‘যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

প্রাণঘাতী নজির ভারতশাসিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি ঘটেছিল ২০১৯ সালে পুলওয়ামায়। ওই সময় এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়িবহরকে লক্ষ্য করে। এতে ৪০ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়। তার ১২ দিন পর ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায়।ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক প্রবীণ ডোনথির মতে, ‘শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, আংশিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপের ফলে, তবে তখন থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক স্থবির হয়ে আছে।’ ইউরোপীয় পররাষ্ট্র সম্পর্ক পরিষদের এশিয়া প্রগ্রামের সদস্য মেলিসা লেভাইয়ান্ত বলেন, মোদি ‘২০১৯ সালে বলপ্রয়োগের সক্ষমতা দেখিয়েছেন এবং এখন সেটিই আবার পুনঃপ্রতিপন্ন করছেন’।

চাপের মুখে মোদি এদিকে দেশের ভেতরে মোদির ওপর পাল্টা জবাব দেওয়ার চাপ বাড়ছে। ডোনথি বলেন, ‘অনেক ভারতীয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ দাবি করছেন। সরকার বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ—এমন সমালোচনাও ব্যাপক।’ হামলার পর ভারতে ব্যাপক বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে লেভাইয়ান্ত এএফপিকে বলেন, ‘তবে ভারতীয়রা আসলে কী চায়, সেটি পরিষ্কার নয়, বিশেষ করে যখন দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান বর্তমানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি আগের মতো সমর্থন দিচ্ছে না।’

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৯ সালের মতো সহিংস ঘটনার পর যেমন হয়েছিল, এবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কম। নিউইয়র্কভিত্তিক থে সাউফান সেন্টারের সিনিয়র গবেষক কলিন ক্লার্ক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউক্রেন, গাজা ও ইরান চুক্তি নিয়ে ব্যস্ত, যা চীনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে এই সংকটে নিজেকে যুক্ত করার।’তিনি আরো বলেন, ‘তবে চীন যেহেতু পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র, ভারত চীনকে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখবে না।’ লেভাইয়ান্তের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য সংঘাত থেকে আরো দূরে থাকবে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অবনতির দিকে এবং ইসলামাবাদ এখন আর আফগানিস্তানে তালেবান ব্যবস্থাপনায় কৌশলগত অংশীদার নয়।’

সামরিক পরিণতি ডোনথির মতে, মোদির যুদ্ধবাজ বক্তব্য সত্ত্বেও ভারত প্রতিক্রিয়ায় সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তিনি এএফপিকে বলেন, ‘কাশ্মীরের ভারত ও পাকিস্তান শাসিত দুই অংশের মধ্যে কার্যত সীমান্ত ‘লাইন অব কন্ট্রোলে’ যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে। তবে ভারত এখনো হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, বিশেষ করে যখন তারা বিশ্বজুড়ে সমর্থন পাচ্ছে বলে মনে করছে।’লেভাইয়ান্ত বলেন, দুই দেশই সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে এই কয়েক দিনের পুরনো সংকটে ‘অনেক অনিশ্চয়তা’ এখনো রয়ে গেছে। সাউফান সেন্টারের ক্লার্ক বলেন, ‘অনেক সময় দীর্ঘদিনের শত্রুদের মধ্যে সংঘাতে পরিস্থিতির গতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয়, যেখানে ‘যুদ্ধের কুয়াশা’ পরিস্থিতিকে আরো বিপজ্জনক করে তোলে।

পারমাণবিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এই হামলার সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত হওয়া। ক্লার্ক বলেন, ‘দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি থাকা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুতর নিরাপত্তা সংকটগুলোর একটি।’ ১৯৪৫ সালে জাপানে মার্কিন পারমাণবিক হামলার ধ্বংসযজ্ঞ একটি বৈশ্বিক ‘পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞা’ তৈরি করেছিল, যা এখন চাপে পড়ছে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বারবার পারমাণবিক হুমকির কারণে।

লেভাইয়ান্ত বলেন, ‘এই নিয়ন্ত্রণহীন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট দেখায়, পারমাণবিক সীমারেখা বদলাচ্ছে।’ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সামাল দেওয়া ‘চরম ঝুঁকিপূর্ণ’। কারণ পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি অত্যন্ত অস্পষ্ট বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে ভারত হয়তো এই নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে দেখাতে চাইবে, তারা ‘একটু একটু করে পাকিস্তানের ভূখণ্ড দখল করতে পারে’ এবং পাকিস্তান তার জবাবে সরাসরি হামলা করবে না।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker