গাইবান্ধাগোবিন্দগঞ্জ

গাইবান্ধায় দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের প্রমাণের পরও বহাল তবিয়তে অধ্যক্ষ

ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধার তুলসীঘাট শামছুল হক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ একরামুল হক খানের বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষের এই দুর্নীতির সত্যতা মিলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদন্তেও।

এছাড়া অবৈধ নিয়োগ, অনৈতিক প্রক্রিয়ায় বেতন আদায়সহ একরামুল হক খানের বিরুদ্ধে আরও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর আগে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মেলে। তবে এতসব কিছুর পরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন অধ্যক্ষ একরামুল। কারণ তিন মাস ধরে মাউশির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ বিষয়ে শুধু চিঠি চালাচালিই করে যাচ্ছেন।

২০১৮ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় নিজ হিসাবে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি স্বীকার করেন অধ্যক্ষ একরামুল। নিজের সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়ে কলেজের যৌথ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তিনি কলেজের যৌথ অ্যাকাউন্টে মাত্র ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫০৯ টাকা জমা দিয়ে পরবর্তী সভায় অনুমোদন নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে কলেজটির ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আবু বকর সরকারের দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে তদন্তে নামে মাউশির রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী আবু বকর সরকার বলেন, ‘টাকা আত্মসাতের কৌশল হিসেবে অধ্যক্ষ নিজস্ব হিসাব ব্যবহার করতেন।একরামুল হক খান কলেজে যোগ দেওয়ার পর থেকে পকেট কমিটির (ব্যবস্থাপনা) মাধ্যমে কলেজ চালান। শুধু এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থেকে আমরা যে হিসাব পেয়েছি তাতে গত ২৮ বছরে কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করে কলেজটিকে পঙ্গু বানিয়ে দিয়েছেন অধ্যক্ষ।’

এছাড়াও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। অধ্যক্ষ একরামুল হক খান খাতা-কলমে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে একজনকে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও ভুক্ত করেন। অথচ ওই নামে বাস্তবে কলেজে কেউ কর্মরত ছিল না। ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি এই নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন। পরে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের একটি তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে বিষয়টি ধরা পড়লে ওই ভুয়া নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ভুয়া ওই নিয়োগের বিপরীতে উত্তোলন করা টাকা সরকারের কোষাগারে ফেরত দেওয়ার চিঠি দেওয়া হলেও একরামুল হক খান সেটি করেননি। উল্টো একই ইনডেক্স (এমপিওভুক্তির নম্বর) ব্যবহার করে একজন কম্পিউটার প্রদর্শককে এমপিওভুক্ত করেছেন।

অভিযোগ আছে, নিজেরা এমপিও ভুক্ত শিক্ষক হওয়া সত্তেও একরামুল হক খানসহ আরও তিনজন শিক্ষক কলেজের অনার্স শাখার শিক্ষক হিসেবে কলেজ তহবিল থেকে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা করে বেতন নেন। যা আইনত অবৈধ। এছাড়া তিনি সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি (ডিসি) আবদুল মতিনের স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নুরনেহার ইয়াসমিন সরকারের পদোন্নতির জন্য মাউশির রংপুর অঞ্চলে আবেদন পাঠিয়েছেন। সেই সাথে কম্পিউটার প্রভাষক মো: শহিদুল ইসলাম মন্ডলের পদোন্নতির আবেদন করলে ভেরিফিকেশন নিডেড লিখে রিজেক্ট হওয়ার পরও তদন্ত না করে সভাপতিকে ভুল বুঝিয়ে পুনরায় পদোন্নতির আবেদন পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ। যা আইনত অবৈধ।

তুলসীঘাট শামছুল হক ডিগ্রি কলেজের বিএম শাখা ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এরপর এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকরা আবেদন করলে গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এক অফিস আদেশে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো: রেজাউল করিম, সেক্রেটারিয়াল সাইন্সের প্রভাষক এস এম আয়েশা আক্তার বানু, বাংলার প্রভাষক এস এম শামিম সুলতান সুমন, প্রদর্শক এরশাদুল হক, ল্যাব অ্যাসিসট্যান্ট মাহবুবুর রহমান ও মকদুবর রহমানের এমপিওভুক্তির আবেদন বাতিল হয়। অসম্পুর্ণ, ত্রুটিভুপূর্ণ ও কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তাদের আবেদনটি বাতিল হয়। গভর্নিং বডির কাছে তথ্য গোপন করে তাদের বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে মকদুবর রহমান ঢাকায় পোশাক শ্রমিক ও মাহবুবুর রহমান গাইবান্ধা জজ কোর্টে মুহুরি হিসেবে কাজ করছেন। এই দুজনের স্বাক্ষর জাল করে অধ্যক্ষ প্রতিমাসে বেতনের টাকা আত্মসাত করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে এত সব অভিযোগের সবকিছুই অস্বীকার করে উল্টো তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরাই দুর্নীতিবাজ বলে দাবি করছেন অধ্যক্ষ একরামুল হক খান।

তিনি বলেন, ‘আমি ৩২ বছর কলেজটির প্রিন্সিপাল। শূন্য থেকে কলেজটিকে আমি অনার্স পর্যন্ত নিয়ে গেছি। দুর্নীতি করলে কোটিপতি হয়ে যেতাম। যারা অভিযোগ করেছে তারাই দুর্নীতিবাজ। কলেজটিকে বিশৃঙ্খলায় নিয়ে যেতে তারা এই অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker