নোয়াখালীর সেনবাগে চুমকি (২৬) নামে এক হিজড়া টাকা আদায়ের জন্য গায়ে কেরোসিন লাগিয়ে ভয় দেখাতে গিয়ে দগ্ধ হয়েছেন।
বুধবার (১৬ মার্চ) ঘটা এ ঘটনায় শুক্রবার (১৮ মার্চ) উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের নিজসেনবাগ গ্রাম থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ দুই নারীসহ তিনজনকে আটক করে।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার চার নং কাদরা ইউনিয়নের নিজসেনবাগ মধ্যপাড়া রাজ্জাক পুলিশের বাড়িতে নবজাতক জন্মের পর দুই হিজড়া ওই বাড়িতে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু তাদের দাবিকৃত ওই টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে ভয় দেখাতে গিয়ে দগ্ধ হন চুমকী (২৫) নামের এক হিজড়া।
এ ঘটনায় দগ্ধ হিজড়াকে তার সহযোগীরা উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি করান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক চুমকীকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করলে তারা ওই হাসপাতালে না গিয়ে শুক্রবার সকালে সেনবাগ থানায় এসে প্রতিকার চাইলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
এরপর সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) এমদাদুল হকের নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই বাড়ির দুই নারী ও এক পুরুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
আটক জহিরুল ইসলাম নয়ন (২৮) ও তার পিতা মুজিবুল হক জানান, গত ১১ মার্চ শুক্রবার দুপুরে জহিরুল ইসলামের স্ত্রী একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন।
এরপর বুধবার হিজড়া চুমকী ও তার সহযোগী সোহাগী তাদের বাড়িতে গিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। এসময় ওই বাড়িতে কোন পুরুষ সদস্য না থাকায় বাড়ির নারীরা দুই হিজড়াকে চারশ’ টাকা দিয়ে বিদায় করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু ওই দুইজন তাদের পাঁচ হাজার টাকার দাবিতে অনড় থাকেন। এক পর্যায়ে হিজড়া চুমকী নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার চেষ্টার সময় দগ্ধ হন।
এসময় বাড়ি মহিলা ও পরে মসজিদ থেকে পুরুষরা এসে দগ্ধ চুমকীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসার জন্য ১৫শ’ টাকা দিলে তারা চলে যান।
তবে আহত চুমকি জানান, তিনিসহ আরো একজন ঐ বাড়িতে গিয়ে দুইশ’ টাকা চাইলে তারা একশ’ টাকা দেন। তিনি তা নিতে না চাইলে বাবা ও মেয়ে মিলে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
কাদরা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি সদস্য) মেম্বার আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। অভিযুক্ত নয়নের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, নয়নের পরিবারের সদস্যদের দাবি, হিজড়া চুমকি তাদের চুলায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে ওই আগুন তার গায়ে দেয়।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন জানান, হিজড়ারা ঐ বাড়িতে গিয়ে প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু বাড়ির লোকজন চারশ’ টাকা দিতে চাইলে তারা নিতে রাজী হননি।
এক পর্যায়ে নিজের কাছে থাকা কেরোসিনের বোতল থেকে তেল বের করে রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুন নিজেদের গায়ে লাগিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতে গেলে এ ঘটনাটি ঘটে।
বর্তমানে এ ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।