সাহিত্য

ভাষা সৈনিক খাদেমুল ইসলাম ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাজপথের এক লড়াকু সৈনিকের গল্প

মাসুদ সরকার, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি: ভাষা সৈনিক খাদেমুল ইসলাম। জন্ম ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০ সাল। বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরহাট থানার আর্জুনপুর গ্রামে। জন্ম স্থান নানার বাড়ি পত্নীতলা উপজেলার গগনপুর গ্রামে। তাঁর পিতা খইবর আলী ছিলেন এলাকার একজন নামকরা ও সুনামধন্য স্কুল শিক্ষক। মৃত্যু পূর্বে এ নিভূত চারী ভাষা সৈনিক পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌর সদরের চাঁদপুর গ্রামে বসবাস করতেন।

রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে সারা পূর্ব পাকিস্তান যখন উত্তাল তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম, এ শেষবর্ষের ছাত্র। সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল সমাবেশ করার প্রস্তুতি গ্রহন করে। প্রতি দলে ১০ জন করে ভাগ হয়ে মিছিল আকারে রাস্তায় নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত করে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একুশ তারিখে সকালে মিছিল নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে পড়ে প্রথম দলেই ছিলেন ভাষা সৈনিক জনাব খাদেমুল ইসলাম স্যার।
বাংলা ভাষার জন্য কারাভোগ।

মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রধান সড়কে নামার পরই পুলিশ তাকে সহ আরো প্রায় ৫০ জন ছাত্রকে আটক করে। প্রথমে লালবাগ থানায় ও পরে সন্ধ্যায় জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। ওখানে বসে তিনি শুনতে পান তার দলে থাকা রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত মিছিলের উপর চলা পুলিশের গুলিতে ঘটনা স্থলেই শহীদ হন। এর মধ্যে বরকত তার সহপাটি ছিলেন। বরকত সকাল দশটায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

কারা অভ্যন্তরে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ।

কারার মধ্যে সারা রাত মশার যন্ত্রণা, মাথায় ময়লা ইটের বালিশ, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অনাহারে ও অর্ধাহারে তাকে টানা ২৮ দিন জেল খানায় কাটাতে হয়। জেল খানায় তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একি সেলে ছিলেম।
কর্মজীবন।

পড়া-শুনা শেষ করে নিজ এলাকায় ফিরে এসে পিতার পেশা শিক্ষকতায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। ১৯৫৩ সালের শেষের দিকে নজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ধামইরহাট সফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এবং দীর্ঘ সফল কর্মজীবনের পর ১৯৯০ সালে ধামইরহাট সদরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ হতে অবসর গ্রহন করেন।কর্মজীবনে তিনি বহু দরিদ্র ছাত্র ছাত্রীকে বিনা পয়সায় পাঠ দান করিয়েছেন তার তৈরী করা বহু ছাত্র-ছাত্রী আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত সরকারি ও বেসরকারি উর্ধতন কর্মকর্তা-কর্মচারি। ভাষা সৈনিক খাদেমুল ইসলাম ভাষা আন্দোলোমে সরাসরি অংশ গ্রহণকারী বিরল ইতিহাসের গর্বিত অংশীদারিত্বের অধিকারী হওয়ার সত্তেও তিনি নিজেকে জনসম্মুখে জাহির করতেন না।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker