ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহল মূলত ‘তেজো মহালয়’ নামে একটি মন্দির কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি নিয়ে এবার আদালতে গিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তথ্য অনুসন্ধানী দল গড়ার আর্জি নিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনৌ বেঞ্চে এক পিটিশন দাখিল করেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির অযোধ্যা জেলার মিডিয়া ইনচার্জ রজনীশ সিং।
পিটিশন দায়েরকারী রজনীশ সিং জানিয়েছেন, তাজমহল নিয়ে বহু পুরনো বিতর্ক রয়েছে। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনের ভিতরে ২০টি ঘর তালাবন্ধ। কাউকে সেখানে ঢুকতেও দেওয়া হয় না। মনে করা হয়, সেই ঘরগুলিতে হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি ও সনাতন ধর্মের পুরোনো গ্রন্থ লুকানো রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আদালতে কাছে আবেদন করেছি যাতে তারা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে ঘরগুলি খোলার নির্দেশ দেয়। ওই ঘরগুলি খোলা হলে তো কোনও সমস্যা নেই। যদি সেখানে কিছু না থাকে, তাহলে সমস্ত বিতর্কের অবসান হবে।
এদিকে, বিরোধীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাকে আড়াল করতেই ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদি সরকারের ব্যর্থতা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতেই এই বিষয়গুলো নিয়ে হাওয়া গরম করে ফায়দা তুলতে চাইছে তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার সময়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা স্লোগান দিয়েছিল, ‘ইয়ে তো স্রিফ ঝাঁকি হ্যায়, কাশী-মথুরা বাকি হ্যায়’। নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরার পরই হিন্দুত্ববাদীরা কাশী ও মথুরার ধর্মস্থানে মসজিদ সরানোর দাবি তুলে আসরে নামে। বিষয়টি নিয়ে মামলা গড়ায় আদালতে।
এরই মধ্যে বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দির লাগোয়া জ্ঞানবাপী মসদিজ ও মথুরায় শাহি মসজিদ আগে মন্দির ছিল বলে দাবি করে আদালতে গিয়েছে বিজেপি। আদালত এটি তদন্ত করে দেখার নির্দেশও দিয়েছে। শনিবার (৭ মে) সেখানে চালানো হয়েছে ভিডিয়োগ্রাফি এবং পর্যবেক্ষণের কাজ। এই প্রক্রিয়া চলার সময় বিরাট নিরাপত্তাবাহিনী গোটা এলাকা ঘিরে রাখে।
আর উত্তর প্রদেশের কৃষ্ণ জন্মভূমিতে ১৬৬৯-৭০ সালে আওরঙ্গজেবের আমলে গড়ে তোলা শাহি মসজিদ ইদগাহ সরানো নিয়ে আবেদনের রায় স্থগিত রেখেছে আদালত। বৃহস্পতিবার (৫ মে) দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে দায়রা আদালতের বিচারক ১৯ মে রায়দানের ঘোষণার কথা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য, ১৯৯১ সালের ধর্মস্থান সংক্রান্ত আইনে বলা রয়েছে, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার দিন যেখানে যে ধর্মস্থান রয়েছে, সেখানে তা থাকবে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের এক বছর আগে তৈরি ওই আইন মানলে কাশী বা মথুরা মন্দিরের লাগোয়া মসজিদ সরানোর দাবি অনৈতিক।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আগ্রার এই ঐতিহাসিক সৌধটিকে ধ্বংস করে দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ বিনয় কাটিহার। তাজমহল নয়, আগ্রায় যমুনার তীরে একমাত্র তেজোমহলেরই অস্তিত্ব থাকা উচিত বলে বক্তব্যে বলেন তিনি। এই সাংসদই একসময় দাবি করেছিলেন, আগ্রায় যেখানে আজ তাজমহল দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে তেজোমহল বলে একটি হিন্দু মন্দির ছিল।