পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন চমক। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের এক সময়ের মিত্র জাহাঙ্গীর খান তারিন বিরোধী দলকে সমর্থন জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদে ইমরান খানের প্রিয় প্রার্থী সম্ভবত বসে নেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফের ছেলে হামজা শাহবাজ তারিন গ্রুপের সমর্থনে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন-এর সিনিয়র নেতা ইসহাক দার শনিবার এ ঘোষণা দেন। উসমান বাজদারের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তিনি। ইমরান খানের নির্দেশে তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু ইমরান চেয়েছিলেন তাঁর প্রিয় পারভেজ এলাহী মুখ্যমন্ত্রী হোক। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না।
লন্ডনের একটি হোটেলে সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এবং ইমরান খানের দল, পিটিআইয়ের সাবেক মহাসচিব জাহাঙ্গীর তারিনের মধ্যে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সূত্রের খবর, ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়েও দুপক্ষ আলোচনা করেছেন। আগামী রবিবার এ নিয়ে ভোট হবে।
দার ও তারিন ফোন করেছে দুদিন আগে। তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তারা পাঞ্জাব ও কেন্দ্রে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা করেছেন।
এদিকে, তারিন গ্রুপের মুখপাত্র অয়ন চৌধুরী দাবি করেছেন, তাদের ১৬ জন সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন করবেন। সূত্র জানায়, হামজা শাহবাজ আজ পিটিআইয়ের বিক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং তারা তাকে প্রয়োজনীয় সমর্থনও দেবেন।
এদিকে, পিএমএল-কিউ নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনিস এলাহি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে পারভেজ এলাহীকে সমর্থন করার জন্য জাহাঙ্গীর তারিনের গোষ্ঠীকে রাজি করাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি।
এক্টিভিস্ট জেনারেল, পাকিস্তান সেনাবাহিনী কোন দিকে!
পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার সাথে সাথে দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশ পরিবর্তনে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাশে থাকবেন নাকি বিরোধী দলে যোগ দেবেন।
শুক্রবার একটি বেসরকারি চ্যানেলে এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেছিলেন যে সামরিক সংস্থা তাকে বিরোধীদের কাজ থেকে তিনটি বিকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সামরিক সূত্রে জানা গেছে, সামরিক নেতৃত্ব বিরোধী পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব আনেননি। তারা পরিবর্তে বেসামরিক সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বকে ডেকেছে এবং চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে।
সরকারের অনুরোধে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং আইএসআই ডিজি বুধবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে দুই পক্ষ তিনটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছে।
সামরিক সূত্র জানায়, তিনটি বিকল্পের মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব, ইমরান খানের পদত্যাগ এবং সংসদ ভেঙে দেওয়া। তবে প্রধানমন্ত্রী প্রথম দুটি বিকল্প প্রত্যাখ্যান করে তৃতীয়টিতে রাজি হয়েছেন।
সামরিক সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসব আলোচনার পর একই দিনে সেনাপ্রধান ও আইএসআই ডিজি বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারা সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়ে ব্রিফ করেন। তবে বিরোধী নেতৃত্ব সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ তিনটি বিকল্পই প্রত্যাখ্যান করেছে।
সামরিক সূত্রে জানা গেছে, সামরিক নেতৃত্ব বিরোধী নেতাদের জানিয়ে দিয়েছে যে তারা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করবে না। তারা সবেমাত্র সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা তিনটি বিকল্প বিরোধী শিবিরের কাছে পৌঁছেছে।
একটি সুপরিচিত সূত্র দ্য নিউজকে বলেছে যে সামরিক স্থাপনা পক্ষ নেবে না, নিরপেক্ষ থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দল উভয়কে একসঙ্গে বসতে এবং একটি ভাল ভবিষ্যত, স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আলোচনা করতে উত্সাহিত করবে।
