কাজ তার প্রতারণা করা। নিজেকে জ্বীনের বাদশা পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে দিতেন চম্পট। তার এমন প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই হয়েছে ফতুর। আবার তার এ ফাঁদে পা বাড়িয়ে কেউ কেউ গোয়ালের গরু আর বাড়ীর ভিটে বিক্রি করেও সন্তুষ্ট করতে পারেননি তাকে।
নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের কিষামত দোগাছী গ্রামের সেই কথিত জ্বীনের বাদশা মো. আফজাল করিম (৫২) এবার আটক হয়েছেন পুলিশের জালে বলে জানান নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদ উন নবী।
পুলিশ জানায়, কথিত ওই জ্বীনের বাদশা আফজালের বিরুদ্ধে প্রতারণা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট প্রমান ছাড়া তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছি না। মঙ্গলবার (২৪ মে) আট লাখ টাকা প্রতারণার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের তথ্যমতে, সম্প্রতি তার এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার আশরাফ আলী (৪৮) ও তার ভাতিজী রশিদা বেগম (৩০)। ওই প্রতারক তাদের ঘরের মধ্যে বসবাস করা বদজ্বীন তাড়ানো ও গুপ্তধন পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেন আট লাখ টাকা।
এমনকী ওই গুপ্তধনের প্রলোভনে তিনটি ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নেন তাদের স্বাক্ষর। তাকে গ্রেপ্তারের পর ওই ননজুডিশিয়ার স্ট্যাম্পসহ আরও অনেক ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার হয় তার কাছ থেকে।
ভুক্তভোগী আফজাল করিম জানান, গত বছরের পাঁচ সেপ্টেম্বর কথিত জ্বীনের বাদশা সাহায্যের জন্য আমার বাড়ীতে যায়। সেদিন তাকে এক কেজি চাল দেওয়ার পর একটি কোরআন শরীফ কেনার টাকা চান। টাকা কম থাকায় তাকে ১৫০ টাকা প্রদান করা হলে চলে যান। এরপর তার (আফজাল) বাড়ীর মধ্যে খরাপ জ্বীন বসবাসের কথা জানান তিনি। পরবর্তীতে মোবাইল নম্বর নিয়ে গিয়ে ফোনে ওই জ্বীন তাড়ানোর জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করলে ১৫ হাজার টাকা প্রদাণ করা হয়।
এরপর থেকে দফায় দফায় প্রলোভন ও ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে দুই পরিবারের কাছ থেকে আট লাখ টাকা আদায় করেন ওই প্রতারক। সবশেষ তিনটি ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে দিয়ে গত ৮ মে ফোনে ওই স্ট্যাম্প বাবদ ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন।
তিনি বলেন, প্রলোভন এবং ভয়ভীতির কারণে আমি এবং আমার ভাতিজী জমি ও গরু বিক্রি করে ওই আট লাখ টাকা দেই। এরপরও ত্রিশ লাখ টাকার দাবি করলে গত মঙ্গলবার নীলফামারী সদর থানায় তাঁর বিরোদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করি।’
এবিষয়ে নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদ উন নবী বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমান নন জুডিশীয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়। যাতে বেশ ক’জনের স্বাক্ষর রয়েছে। বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।