রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না “বাল্যবিবাহ”
বাড়ি থেকে ভেসে আসছে কান্নার সুর! গিয়ে দেখলাম একটি মেয়ে কান্না করছে।
বয়স তেমন বেশি না আন্দাজ করে নিলাম ১৪-১৫ বছর হবে। কথা বলে জানতে পারলাম নবম শ্রেণীতে পড়ে। মেয়েটি বারবার বলছে, “মা আমি আর যাব না। আমি আর শ্বশুরবাড়ি যাব না। অনেক কাজ করতে হয় মা। আমি তো তেমন কাজ করতে পারি না। আমারতো এখন সংসার করার কথা না মা। আমার এখন স্কুলে পড়ার কথা। আমিতো আর স্কুলে যেতে পারছি না। আমার অনেক কষ্ট হয় মা। আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আমি কি আর ডাক্তার হতে পারবো না মা? মেয়েটির বাবাও পাশে চুপচাপ শুনছে সবকিছু কিন্তু কিছু বলছে না।”
বলছি অল্প বয়সী একটি মেয়ের কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাই নাম প্রকাশ করলাম না। আমাদের দেশে এরকম হাজারো মেয়ের লুকানো আর্তনাদ যা আমরা শুনতে পাই না। ধ্বংস হয়ে যায় তাদের স্বপ্ন। বিপর্যয়ে পরছে তাদের জীবন।
মূলত আজকে কথা বলব আমাদের দেশের একটি সামাজিক ব্যাধি “বাল্যবিবাহ”। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, মেয়েদের কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছরের আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে বাল্যবিবাহ বলে। মেয়েদের ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর পর্যন্ত শিশুকাল ধরা হয়। বাল্য বিবাহকে শিশুবিবাহও বলা হয়।
বর্তমানে আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৩ থেকে ১৪ বছরের মেয়েদের বিয়ে হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের আইনে বাল্য বিয়ের জন্য নিম্নোক্ত শাস্তির বিধান রয়েছে:
✓ বাল্যবিবাহকারীর শাস্তি:
একুশ বা তদুর্ধ্ব বয়সের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষ বা আঠার বা তদুর্ধ্ব বয়সের অধিক বয়স্ক কোন নারী কোন অপরিণত বয়স্ক ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি করলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
✓ বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠান বা পরিচালনাকারীর শাস্তি:
কোন ব্যক্তি বাল্য বিয়ে অনুষ্ঠান বা পরিচালনা করলে সেই ব্যক্তি দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করতে পারেন যে, বিয়েটি বাল্যবিবাহ ছিল না বলে বিশ্বাস করার মত যথেষ্ট যুক্তি ছিল।
✓ বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত পিতামাতা বা অভিভাবকের শাস্তি:
বাল্য বিয়ের সাথে জড়িত পিতামাতা বা অভিভাবকেরা যদি বিয়ের অনুমতি প্রদান করেন অথবা বিয়ে বন্ধ করার জন্য ব্যর্থ হন তাহলে দুই বৎসর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডনীয় হবেন। তবে কোন মহিলা দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে কারাদন্ড প্রদান করা যাবে না। অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য নানান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের দেশে এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোও ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু এখনো বন্ধ হচ্ছে না আমাদের দেশ থেকে “বাল্যবিবাহ”। যতদিন পর্যন্ত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা না যাবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের মেয়েদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাই কি জানতে হবে কি কারনে বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়।
অনেক অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নানান সমস্যার কারণে মেয়ের বাবা সন্তানের নিরাপত্তাহীনতায় ভুবেন। স্কুলে যাওয়ার সময় ইভটিজিং এর শিকার হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা উশৃংখল ছেলেরা মেয়েদের ইভটিজিং করে। অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এজন্য অনেকেই অল্প বয়সে তার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
এছাড়া দরিদ্রতা, অসচেতনতা, মেয়েদের প্রতি অবহেলাসহ নানান সমস্যার কারণে অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। আপনার আমার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে মেয়ের জীবন নষ্ট হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের সাজানো স্বপ্ন।
আসুন আমরা সবাই বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অবগত হই ,সচেতন হই।
বাল্যবিবাহ কে না বলি, সুন্দর একটি সমাজ গড়ি।
Discover more from MIssion 90 News
Subscribe to get the latest posts sent to your email.