সাহিত্য

হাসপাতাল থেকে পঙ্গুত্ব কিনে বাড়ি ফিরলাম: তসলিমা

নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর অস্ত্রোপচার করে তার ‘হিপ জয়েন্ট’ বাদ দিয়েছেন চিকিৎসক। সার্জনের ‘ভুল’ চিকিৎসায় তিনি পঙ্গু হতে চলেছেন বলে দাবি করেছেন তসলিমা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিয়ে চিকিৎসকের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পড়া এই লেখিকা। এমনকি লাখ লাখ টাকা খরচ করে হাসপাতাল থেকে ‘পঙ্গুত্ব কিনে’ বাড়ি ফিরেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তসলিমা নাসরিন।

জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তসলিমা নাসরিনের পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
‘লাখ লাখ টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে পঙ্গুত্ব কিনে বাড়ি ফিরলাম। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে হোঁচট খেয়ে পড়ে হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম শুক্রবার রাতেই। এক্স-রে করে দেখতে চেয়েছিলাম হাঁটুর লিগামেন্টে কিছু হলো কি না। হিপ জয়েন্টে কোনো ব্যথা ছিল না আমার। হিপ জয়েন্ট ডাক্তাররা পরীক্ষা করেও দেখেননি। কিন্তু এক্স-রে করে বলে দিলেন আমার হিপ ভেঙেছে, হিপ রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। তারপর তো ডাক্তারদের ওপর শতভাগ বিশ্বাস, আমার অজস্র নির্বুদ্ধিতা, আমাকে ওদের ভিক্টিম করেছে।’

তিনি লেখেন, ‘প্রথম এক্স-রে রিপোর্ট হাতে পেয়েছি, ওরা রিপোর্টটি সরিয়ে ফেলে নতুন করে লেখার আগে। প্রথম রিপোর্টে লেখা ছিল, পুরোনো একখানা ফ্র্যাকচার দেখা যাচ্ছে। হ্যাঁ পুরোনো একখানা ফ্র্যাকচার যেটা কোনো এক কালে ঘটে নিজে নিজেই হিল হয়ে গিয়েছিল। এরকম থাকে শরীরে। হিল হয়ে যাওয়া পুরোনো ফ্র্যাকচারকে আড়াল করে আমাকে নতুন ফ্র্যাকচারের গল্প শুনিয়ে তারা শনিবার দুপুরেই তড়িঘড়ি আমার টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট করে দিলো।’

‘সবচেয়ে হাস্যকর জিনিস, ইমারজেন্সিতে গিয়ে আমি যা বলেছি, আমার হাঁটুর ব্যথার কথা, সেটি সম্পূর্ণ ডিলিট করে দিয়ে ডিসচার্জের সময় নতুন করে হিস্ট্রি লিখে দিয়েছে। যেখানে হাঁটু শব্দটিই নেই, আছে হিপ হিপ হিপ। আমি নাকি হিপ জয়েন্টের যন্ত্রণায় কাতরেছি, আমার হিপ জয়েন্ট নাকি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে।’

‘বাহ, কী সুন্দর হিস্ট্রি পাল্টে দেওয়া হলো। মূল হিস্ট্রি গায়েব।’

তসলিমা আরও লেখেন, ‘আমাকে এখন এই ভেবে সান্ত্বনা পেতে হবে, যেদিন হোঁচট খেয়েছিলাম, সেদিন হয়তো আমার মাথা মেঝেতে লেগে ফেটে যেতে পারতো, আমি মরে যেতে পারতাম। আমার হিপ জয়েন্ট আর ফিমার গেছে চিরতরে। আমার জীবন আর আগের জীবন নেই, আমার চলাফেরা শ্লথ হবে যদি কোনোদিন হাঁটতে পারি, স্থবির জীবনে অজস্র রোগশোক এসে বাসা বাঁধবে। কিন্তু আপাতত বেঁচে তো আছি। এইবা কম কিসে!’

এই পোস্টের চার ঘণ্টা পর আরেক পোস্টে তসলিমা লেখেন, ‘টাকার লোভে কিছু অসৎ ডাক্তার আমি যে রোগের রোগী নই, সেই রোগের রোগী বানিয়ে আমার সর্বনাশ করেছে। আমার আয়ু অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে, জীবনকে দুর্বিষহ করেছে। জীবনযাপনের আনন্দ অনেকটাই নষ্ট করেছে। কিন্তু আমি তো আমিই থাকবো, সে যতদিনই বাঁচি। দীর্ঘজীবন না পাবো, না পেলাম। কিন্তু অল্প কদিনই মাথা উঁচু করেই বাঁচবো। নিজের আদর্শ নিয়েই বাঁচবো। কোনো আদর্শ বিসর্জন দেবো না, মৃত্যু এলে আসুক।’

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker