জবি শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে শাটডাউন ঘোষণা: দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জবি শাটডাউন ঘোষণা করেছেন; পুলিশি হামলার বিচার দাবিতে অনড় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে অবস্থান করছেন।
নিজেদের চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাটডাউন ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। চলমান ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন এই ঘোষণা দেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে রাজধানীর কাকরাইলে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে এই ঘোষণা দেন তিনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনসহ সংশ্লিষ্ট সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির ঘোষণা ও রইস উদ্দিনের বক্তব্য
অধ্যাপক ড. রইস উদ্দিন বলেন:
আমরা এখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার নিয়ে এসেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের দাবি আদায়ের জন্য এসেছি। আমাদের ওপর নির্বিচারে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অরাজকতা এবং অন্যায়। আমরা কারো বিরুদ্ধে এখানে কথা বলতে আসিনি। কোনো ষড়যন্ত্র করতে আসেনি। আমাদের অধিকার চাইতে, আমাদের দাবি আদায় করতে এসেছি। দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না। যতক্ষণ না পর্যন্ত দাবি আদায় হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে ভালো হবে না। আমার চোখের সামনে আমার কোনো শিক্ষার্থীকে কেউ আঘাত করতে পারবে না।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং প্রশাসনের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট চার দফা দাবিগুলো হলো:
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা।
- জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন করা।
- দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাশ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
- শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাকরাইলে অবস্থান চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। এ সময় তারা ‘আবাসন চাই, বঞ্চনা নয়’, ‘বাজেট কাটছাঁট চলবে না’, ‘হামলার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ও পূর্বের ঘটনা
গতকাল বুধবারের ঘটনাবলী:
এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। লং মার্চটি গুলিস্থান, মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের সামনে আসলে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং ছত্রভঙ্গ করতে গরম পানি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তাদের ওপর লাঠিচার্জও করে পুলিশ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
পরবর্তীতে রাতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আন্দোলনকারীদের সামনে বিফ্রিং করতে যান। মাহফুজ কথা বলার সময় তার ওপর শিক্ষার্থীদের একাংশ অসন্তুষ্ট হন এবং তাকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। কথা বলার এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একজন তাকে লক্ষ্য করে বোতল ছুড়ে মারেন। এই পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা মাহফুজ বিফ্রিং বন্ধ করে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যান।
প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে অবস্থান করছে। অবস্থান কর্মসূচি পালন করায় অনেক শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্লান্ত হলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থেকে সরে যাননি কেউই। কেউ কেউ রাতভর রাস্তায় ঘুমিয়ে আজ সকালেও অবস্থান করছেন।