রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে দেওয়া এক বক্তব্যে ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকে ‘তথাকথিত অভ্যুত্থান’ বলে মন্তব্য করেন। আর এতে চটেছেন অনলাইন অ্যাক্টি্ভিস্ট সাদিকুর রহমান খান।
সোমবার রাত ১১টার দিকে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি গণেশ জুলাই আন্দোলনকে তথাকথিত আন্দোলন বলার সাহস পাইলো কেমনে? তার সেই পোস্ট নিজের পেজে শেয়ার করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। ওই পোস্টে সাদিকুর রহমান লিখেছেন, এই আন্দোলনের (জুলাই আন্দোলন) কোন সরকারি স্বীকৃতি নাই।
এখনও বাংলাদেশের বেশিরভাগ আমলা মনে করে জুলাইতে সাজানো গোছানো একটা দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। এক পুলিশ আমাকে একদিন বলেছিল তার জীবনের স্বপ্ন একজন ছাত্র নেতাকে মারতে মারতে মেরে ফেলা। হাসিনার আমলে সে টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েও এই আন্দোলনের কারণে টাকা তুলতে পারেনি। আওয়ামী লীগ তো নারী সমন্বয়ক, জুলাইয়ের পক্ষে থাকা নারী অভিনেত্রীদের কীভাবে অত্যাচার করে রাস্তায় ফেলে রাখবে, সেই বর্ণনা করা শুরু করেছে। এখন বিএনপিও যদি এই আন্দোলনকে অস্বীকার করে বসে, তাহলে কী করবেন?
তিনি লিখেছেন, আগস্টে বিএনপির সমস্ত নেতা বলেছেন জুলাইতে বিপ্লব হয়েছে। ছাত্র জনতার অভূতপূর্ব বিপ্লব নিয়ে সালাহউদ্দিন, রিজভী সবার কথাই আছে। অথচ কিছুদিন আগে সেই নেতারাই কথা ঘুরাইয়া ফেলে বললেন, জুলাইতে কোন বিপ্লব হয় নাই; অভ্যুত্থান হয়েছে। আজ ছাত্রদল নেতা গণেশ বলতেছে, তথাকথিত জুলাই আন্দোলন।
ক্ষমতায় এসে যদি কখনও এরা বলে বসে, জুলাইতে আন্দোলনের পাশাপাশি সন্ত্রাস হয়েছে। তখন কী করবেন? কিছু করার আছে? নাই। সাদিকুর রহমান আরো লিখেছেন, এখনই তো বিপ্লবীদের জামিন দিতেছে না, নিরাপত্তা দিতেছে না। তখন কে দেবে? জানি, ওভারথিঙ্ক লাগতেছে। বাট জুলাইতে কেউ ভাবতে পেরেছিলেন, আট মাসের মাথায় রাজুর সামনে দাঁড়িয়ে কেউ জুলাইকে তথাকথিত আন্দোলন বলার সাহস করবে? করেছে।
সো, আজ থেকে ৩ বছর পর যে এই আন্দোলনকে সন্ত্রাস বলা হবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নাই। এই নিশ্চয়তা না থাকা মানে আপনার গলায় অদৃশ্য ফাঁসির দড়ি ঝুলতে থাকা। এই দড়ি নিয়ে আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। ভয়ে থাকতে হবে, ওরা কখন এই দড়ি ধরে টান মারে। বাঁচার উপায় কী? জুলাই সনদ তৈরি করা। সংবিধানে জুলাই এর স্বীকৃতি। তখন অন্তত গণেশের মতো কেউ আপনার আমার এই আন্দোলনকে অস্বীকার করলেও আমাদের ফাঁসি দিতে পারবে না।
কারণ বাংলাদেশের আদালত তখন আপনার এই আন্দোলনকে সুরক্ষা দিতে বাধ্য থাকবে। আজ ৮ মাস হয়ে গেল, আপনারা জুলাই সনদ তৈরি করতে পারলেন না। জুলাইকে সংবিধানে ইনক্লুড করতে পারলেন না। অথচ ওদিকে ঘড়ির কাঁটা চলতে শুরু করেছে, বিপ্লব থেকে অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান থেকে জুলাইকে তথাকথিত আন্দোলন বানাইয়া ফেলা হচ্ছে। এখনও সময় আছে। তবে এই সময়টা আমাদের হাতে আর খুব বেশিদিন থাকবে না। এর মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র যদি তৈরি করতে না পারেন, আপনার আমার গর্বের বিপ্লবই আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে, কথাটা মনে রাইখেন।