ঠাকুরগাঁয়ের পীরগঞ্জে বাগানের গাছ থেকে আম চুরি করে নিয়ে যাওয়া মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে থানায় উল্টো চুরির মামলা হয়েছে। এক মাস দুই দিন আগের ঘটনা দেখিয়ে বুধবার রাতে ঐ মামলার ২ নং আসামী বাদি হয়ে থানায় এ মামলা দায়ের করেন। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।
আদালতে দায়ের করা প্রায় ৬ লাখ টাকার আম চুরি মামলা সুত্রে জানা যায়, পীরগঞ্জ উপজেলার কোষাবন্দর পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আমজাদ আলী গত ২০১৩ সালে ৬২২৫ এবং ৬৩২২ নং রেজিষ্ট্রি দলিল মুলে কোষা গ্রামের ৭৪৬ নং দাগের এক একর জমি কিনে সেখানে আম রুপালি জাতের আম বাগান করেন।
এরপর ঐ জমি আমজাদ আলীর নামে আলাদা ডিপি খতিয়ান ভুক্ত হয় (ডিপি খতিয়ান-৯৭৮)। বাগান সহ জমি ভোগ দখলে থেকে হালসন পর্যন্ত ঐ জমির ভুমি উন্নয়ন কর প্রদান করেন আমজাদ আলী।
তিনি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চাকরী করার সুবাদে কুড়িগ্রামে অবস্থান করেন। আম বাগান সহ জমি তার স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম দেখাশুনা করেন। এরই মধ্যে পীরগঞ্জের প্রভাবশালী কয়েকজন আম বাগান সহ ঐ জমি দখলে নেওয়ার পায়তারা করে।
এতে ফেরদৌসী বাদি হয়ে ঠাকুরগাও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪/১৫৪ ধারা একটি ( মামলা নং-এমপি ২৩৮/২২) এবং পীরগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আরো একটি মামলা করেন ( মামলা নং ৩৫/২২)। সহকারী জজ আদালত থেকে ফেরদৌসী অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পেলে প্রতিপক্ষরা ক্ষিপ্ত হন।
প্রতিপক্ষরা ও তাদের লোকজন লাঠি সোটা নিয়ে গত ১৫ জুলাই সকালে আমজাদ আলীর ঐ আম রুপালি আম বাগানে হানা দেয় এবং ত্রাস সৃষ্টি করে বাগানের গাছে থাকা প্রায় ৬ লাখ টাকা মুল্যের চার’শ ক্যারেট আম পেরে দুটি ট্রলিতে করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ফেরদৌসী থানায় মামলা করতে গেলে প্রতিপক্ষরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা নেয়নি পুলিশ।
পরে গত ১৮ জুলাই ঐ সাবেক এমপি’র স্ত্রী ও কন্যা সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত নামা ১৫/২০ জনের নামে আতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন ফেরদৌসী (মামলা নং সিআর ১৫৯/২০২২)। আদালত বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অফিসারকে নির্দেশ দেন।
বিষয়টি তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় আম চুরির ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঐ মামলার ২ নং আসামী নজরুল ইসলামকে দিয়ে মুল মামলার বাদি ফেরদৌসী, স্বাক্ষী আমজাদ, আলিমুল ও ফেরদৌস এর বিরুদ্ধে গত বুধবার রাতে উল্টো আম চুরির অভিযোগ এনে থানায় মামলা করিয়েছেন প্রভাবশালী প্রতিপক্ষরা।
এতে অভিযোগ করা হয়, তাদের বাগানের গাছের আম গত ১৫ জুলাই রাতে ফেরদৌসী, আমজাদ, আলিমুল ও ফেরদৌস পেরেচুরি করে নিয়ে যায়। পর দিন দুপুরে এ নিয়ে কথা বললে নজরুলকে মারপিট করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।এ বিষয়ে আলিমুল বলেন, আম চুরির ঘটনার সাথে জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় এর আগে থানায় মামলা নেয়নি পুলিশ।
পরে আদালতে মামলা করা হয়। ঐ মামলা থেকে বাঁচতে মামলার বাদি এবং স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে উল্টো থানায় মামলা করা হয়েছে। সত্য ঘটনায় মামলা না নিলেও পুলিশ প্রভাবশালীদের পক্ষ নিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা নিয়েছেন।
তবে নজরুল ইসলামের দাবি, মিথ্যা নয়, তাদের অভিযোগ ঠিক আছে। মামলা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পীরগঞ্জ থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, আম চুরির এজাহার পেয়ে মামলা করা হয়েছে। কে কার আম চুরি করেছে-তদন্তে বেরিয়ে আসবে।