লালমনিরহাট

বারবার দল বদল করা সেই পাল্টিবাজ মমতাজ এবার আ’লীগের সভাপতি প্রার্থী

আমি বারবার দল বদল করেছি আর দল বদল করতে চাই না। আওয়ামী লীগ দেশের সেরা রাজনৈতিক ও গণমুখী একটি দল। এখানে কাজ করার, জনসেবা করার অনেক সুযোগ। তাই আমি এই দলে বারবার ফিরে এসেছি। আপনারা দোয়া করবেন, আমি যেন আর দল বদল না করি। সামনে মহিষখোচা ইউনিয়ন আ’লীগের সম্মেলন। সেখানে আমি সভাপতি প্রার্থী। জেলা নেতৃবৃন্দ যদি আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেন তাহলে আগামীতে এই ইউনিয়নে আ’লীগকে সুসংগঠিত করে আ’লীগকে শক্তিশালী করতে চাই।

এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন দলবদলের ওস্তাদ, পাল্টিবাজ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ষাটোর্ধ্ব মমতাজ উদ্দিন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী।

মমতাজ উদ্দিন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া (সর্দারপাড়া) গ্রামের মৃত ছৈমুদ্দিনের ছেলে।

এলাকাবাসী জানায়, দল বদলের জন্য মমতাজ উদ্দিনের খ্যাতি পুরো জেলা জুড়ে। এর আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে দুইবার করে যোগদান করেন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনের আগে ফিরে আসেন আওয়ামী লীগে। ওই সময় তিনি বিএনপি ছেড়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদের হাতে সোনার প্রলেপে মোড়ানো পিতলের নৌকা তুলে দিয়ে পুনরায় ফিরে আসেন আওয়ামী লীগে।

এটা তার তৃতীয় দফা আওয়ামী লীগে যোগদান। আ’লীগে যোগ দেয়ার পরপরই তিনি মহিষখোচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী দাবি করে বসেন। পরে তাকে প্রার্থীতা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে নৌকার বিদ্রোহী হয়ে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে হেরে যান। নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় রাগে ক্ষোভো বিএনপিতে যোগ দেয়ার জন্য চলে যান লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর বাড়িতে। সেখানে তাকে সরাসরি বলে দেয়া হয় আপনি একটা পাল্টিবাজ মানুষ, এর আগেও আপনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে সার্থ হাসিল হওয়ার পর আ’লীগে চলে গেছেন। তাই আমাদের দলে আপনার মতো পাল্টিবাজ নীতিভ্রষ্ট মানুষের বিএনপিতে আর কোনদিন জায়গা হবে না। তাই দিকবিদিক না পেয়ে টাকার জোড়ে পুনরায় তৃতীয়বারের আ’লীগে যোগ দেন।

এলাকাবাসী আরো জানায়, বারবার দল বদল করা এই পাল্টিবাজ মমতাজকে যদি মহিষখোচা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে এখানে অনেক ভাল ভাল নেতাকর্মী আ’লীগের রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে অন্য দলে চলে যাবে। অনেকে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়বে। এই পাল্টিবাজ মমতাজকে যেন এই ইউনিয়ন আ’লীগের এতোবড় দায়িত্ব দেয়া না হয় এজন্য তারা আ’লীগের জেলা নেতৃবৃন্দদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

এর আগেও ২০১২ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ না পেয়ে সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর হাতে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। সেবার খুব একটা সুবিধা করতে না পেরে ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে আবারও ফিরে আসেন। শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় ওই বছরই আসাদুল হাবিব দুলুর মাধ্যমে ফের বিএনপিতে যোগ দেন। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগে ফিরলেন এই পাল্টিবাজ মমতাজ উদ্দিন।

স্থানীয়রা জানায়, মমতাজ উদ্দিন ২০১১ সালে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য মজিবর রহমানের হাত ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আসেন। ওই বছরেই তিনি জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

তৃতীয়বার পাল্টিবাজ মমতাজ যখন আ’লীগে যোগ দেয় সেইদিন তিনি প্রায় ১৮ লাখ টাকা বখরচ করে ২০ হাজার লোকের ভূরিভোজ করে আ’লীগে যোগদান করেন। ওই সময় তিনি আদিতমারী উপজেলা ও জেলা শহরে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ ও যোগদান অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করেন। এই যোগদান অনুষ্ঠানের বিষয়টি গোটা জেলা জুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়।

এ বিষয়ে মমতাজ উদ্দিন বলেন,আমি বারবার দল বদল করেছি আর দল বদল করতে চাই না। আওয়ামী লীগ দেশের সেরা রাজনৈতিক ও গণমুখী একটি দল। এখানে কাজ করার, জনসেবা করার অনেক সুযোগ। তাই আমি এই দলে বারবার ফিরে এসেছি। আপনারা দোয়া করবেন, আমি যেন আর দল বদল না করি। আর মানুষকে খাওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, যেহেতু মানুষকে খাওয়ানোর ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন তাই মহিষখোচা ইউনিয়নের মানুষসহ আশপাশের মানুষের জন্য সামান্য খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছি মাত্র।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker