সখিপুর

সখীপুর উপজেলায় একবছরে বিবাহ ৮৩৩, বিবাহ বিচ্ছেদ ৫৭৮

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত এক বছরে তালাকের মাধ্যমে ৫৭৮টি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। বিচ্ছেদের ঘটনা এত কেন? বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, পরকীয়া, নারীর প্রতিবাদী রূপ, নারীর শিক্ষা, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য ক্রমাগত চাপ, স্বামীর নির্যাতন— এসব কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।

সখীপুরের আট ইউনিয়ন ও একমাত্র পৌরসভায় মোট ১২টি কাজি অফিস রয়েছে। কাজি অফিসের নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নে ৪৪টি, যাদবপুর ইউনিয়নে ৪৪টি, বহুরিয়া ইউনিয়নে ২১টি, গজারিয়া ইউনিয়নে ১৮টি, দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে ৩৫টি, কালিয়া ইউনিয়নে ১২০টি, বহেড়াতৈল ইউনিয়নে ৬৯টি, কাকড়াজান ইউনিয়নে ৬৩টি ও পৌরসভার চারটি কার্যালয়ে ১৫৪টি বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) নিবন্ধন করা হয়েছে।

উপজেলায় এক বছরে বিবাহ ৮৩৩ টি বিবাহবিচ্ছেদ ৫৭৮টি। এরমধ্যে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ১৭টি, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে ২৯৭ টি ও ছেলে-মেয়েপক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে ২৬৪টি বিয়ের তালাক নিবন্ধন করা হয়েছে। উপজেলার ১২টি কাজির কার্যালয় ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া যায়।

কনেপক্ষের তালাককে ডি-তালাক, ছেলেপক্ষের তালাককে বি-তালাক ও ছেলে-মেয়ের সমঝোতার তালাককে সি-তালাক বলা হয় বলে জানালেন কালিয়া ইউনিয়ন নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজি) মাহবুব সাদিক।

একজন নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘সামান্য কারণে একজন নারী কখনো বিবাহবিচ্ছেদ চান না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন যখন সীমা অতিক্রম করে, তখন বাধ্য হয়েই এই কাজ করতে হয়।’

সখীপুর উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার কাজি শফিউল ইসলাম বলেন, বাল্যবিবাহ, স্বামী বিদেশে থাকা ও পরকীয়াঘটিত নানা জটিলতা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারে ফাটল ধরে পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নিচ্ছে। তিনি জানান, সখীপুরের ৯০ শতাংশ তালাক স্ত্রীরা দিয়েছেন।

এক নারী তার বিবাহবিচ্ছেদের পেছনের কারণ জানান এই প্রতিবেদককে। তার স্বামী বিয়ে করে ১৫ দিনের মাথায় বিদেশ চলে যান। বিয়ের সময় শর্ত ছিল স্ত্রীকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হবে। কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ থেকে বলেন পড়াশোনা করা যাবে না। কেন? স্বামী তখন ফোনে জানিয়েছিলেন তার স্ত্রী নাকি অন্য কারও সঙ্গে প্রেম করছে। পড়াশোনা করলে তাকে ফেলে চলে যাবেন। এসব মিথ্যা বলে স্ত্রীকে পড়াশোনা বন্ধ করার জন্য চাপ দেন। তবু স্ত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যান। এরপর থেকে স্বামী কোনো খরচ দেন না তাকে। কোনো ফোন করেন না। মেয়েটিকে তালাক দেবেন বলে হুমকি দেন। দুই বছর স্বামী তার খোঁজ না নেওয়ায় স্ত্রীই স্বামীকে তালাক দেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফিরোজা আক্তার বলেন, ‘আগে নারীর ক্ষমতায়ন এখনকার মতো ছিল না। পুরুষদের অত্যাচার সহ্য করে নীরবে সংসার করেছে। এখন মেয়েরা সচেতন, শিক্ষিত ও অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ায় মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এখন মেয়েরা আর নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চায় না।’ এখন আগের চেয়ে নারীরা শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ায় তাদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আর মুখ বুঝে থাকেন না। তাই হয়তো বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যাটা বেড়েছে।

সখীপুর মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক বাবুল আকতার বলেন, স্বামী প্রবাসে থাকা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির অমিল, পরকীয়া, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রভাব, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব এবং বাঙালি সংস্কৃতির বিচ্যুতি, মূল্যবোধগত অবক্ষয়সহ নানা কারণে স্ত্রী কর্তৃক তালাকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী জানান, তালাক কমাতে হলে আগে বাল্যবিয়ে ঠেকাতে হবে। এ ছাড়া অসময় বিয়ে, যৌতুক, দীর্ঘদিন স্বামী প্রবাসে থাকা, পরকীয়া, স্বামী কর্তৃক নির্যাতন তালাকের অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker