টাঙ্গাইল

জীবিত হয়েছেন ২৭ মৃত, কাজ চলছে ২০৩ জনের ‘প্রাণ ফেরানোর’

বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই জয়গন বেগমের। ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট তার মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে ভোটার তথ্য হালনাগাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে মৃত দেখানো হয়েছে। অথচ ৯ বছর ধরেই জীবিত রয়েছেন জয়গন বেগম। কাগজে-কলমে মৃত দেখানোর কারণে তিনি কয়েক বছর ধরে বিধবা ভাতা থেকে বঞ্চিত।

জয়গন বেগম টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের কামারকুমুল্লী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মৃত ইউসুফ আলীর স্ত্রী। বিধবা জয়গন বেগমের কোনো সন্তান না থাকায় বাড়ির ভিটেমাটি বিক্রি করে কয়েক বছর যাবত ভাইয়ের বাড়ি বড়কুমুল্লী গ্রামে বসবাস করছেন। এমন ভুলের জন্য তথ্য হালনাগাদকারীকে দায়ী করছেন স্বজনরা।

আরো পড়ুুন: রমজান জুড়ে ১০ টাকা লিটার গরুর দুধ: আবার কেউ পাচ্ছেন বিনামূল্যে

আরেক ভুক্তভোগী ধোপাকান্দি ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই চন্দ্র দাসের স্ত্রী সাবিত্রী রানী। তার অভিযোগ, ভোটার হালনাগাদের সময় মৃত তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ১৯ মার্চ মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। পরে নির্বাচন অফিসে গেলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছ থেকে জীবিত থাকার সনদপত্রসহ আবেদন করতে বলা হয়।

এরপর ধোপাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে গত ২০ মার্চ মৃত থেকে জীবিত হওয়ার প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন। সেই প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবিত্রী রানী মারা যাননি। তিনি অত্র ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা এবং জন্মসূত্রে বাংলাদেশের স্থায়ী একজন নাগরিক। তিনি স্বশরীরে ইউপি অফিসে হাজিরা দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি জীবিত আছেন। অতএব তিনি বেঁচে আছেন, ভোটার তথ্য হালনাগাদে এমন ভুয়া তথ্য সংশোধন করে তাকে হয়রানি থেকে মুক্ত করা হোক।

Image

আরো পড়ুন: বেনাপোল বন্দরে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৫৬ কোটি টাকা

একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জোত বিষ্ণুপুর গ্রামের নিতাই দাসের ছেলে দীপক দাস, গান্দাইল গ্রামের আবু হানিফা ও মনতলা গ্রামের রোকেয়া বেগম ও পৌরসভার গাংগাপাড়া গ্রামের আমান আলীর ছেলে শাফিকুল ইসলামসহ ২৭ জন ব্যক্তিকে ভোটার তথ্য হালনাগাদে ১২নং ফরমে মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণে জরুরি বিভিন্ন সেবা থেকে মাসের পর মাস বঞ্চিত ও বিভিন্ন কাজে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সংশোধন বিশেষ ফরমে আবেদন করে মৃত তালিকা থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করে জীবিত হতে সক্ষম হয়েছেন।

আরো পড়ুন: রাজধানীতে পরিবহনে নৈরাজ্য, ভাঙাচোরা নিষিদ্ধ লেগুনা চলছে ‘বীরবেশে’

গোপালপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: মতিউর রহমান বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারি নিয়ম মোতাবেক মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তাদেরকে সম্মানজনক সম্মানি, তথ্য হালনাগাদে প্রশিক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহের কাজের নিয়মাবলি শিখিয়ে দেওয়া হয়। পরে তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন। তাদের গাফিলতির কারণে জীবিত ব্যক্তিদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ২৭ জন জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়। অথচ পরে জানতে পারি তারা জীবিত আছেন। পরে আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে ‘জীবিত’ করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২২ সালে তথ্য হালনাগাদে আরও ২০৩টি ডাটাবেইজের তথ্য ভুল রয়েছে। জীবিত ব্যক্তিরা মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের সঠিক ডাটাবেইজ খুঁজে বের করে জীবিত (সংশোধন) করার কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত তারা জীবিত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।

Image

আরো পড়ুন: রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের এমডির গাড়িতে চালকের বস্তাবন্দি লাশ

এ বিষয়ে গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসফিয়া সিরাত জানান, ভোটার হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহকারীরা ২০৩ জন বিভিন্ন বয়সী জীবিত ব্যক্তিকে মৃত হিসেবে ভোটার হালনাগাদ তালিকায় ১২নং ফরমে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এরই মধ্যে ২৭ জনের ডাটাবেইজ সংশোধন করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ভোটার হালনাগাদের ডাটাবেইজ দেখে তা যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও তথ্য সংগ্রহকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker