নারায়ণগঞ্জে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ও স্থিরচিত্র ছড়িয়ে পড়ায় রুপা আক্তার নামে ২১ বছর বয়সী এক তরুণী আত্মহত্যা করেছে।
গতকাল সোমবার (৬ জুন) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার বালিগাঁও এলাকার বাড়ির নিজ কক্ষের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ওই তরুণী আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যা করার আগে রুপা আক্তার ২ জুন বন্দর থানায় ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় কাউকে তখন গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। উল্টো এ নিয়ে স্থানীয়রা সালিস করে ভুক্তভোগীকে কটূক্তি করে। এ ঘটনায় কলাগাছিয়া ইউনিয়নের একজন মেম্বারকে ফরাজিকান্দা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে আত্মহত্যার সংবাদ পেয়ে বন্দর থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মহসিন ও মদনগঞ্জ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মহসিন দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে বেলা ১২টায় মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এর আগে, গত ২ জুন বৃহস্পতিবার রুপার আক্তারকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নুরুল আমিন নামের এক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে এমন অভিযোগ জানিয়ে মা রিনা বেগম বন্দর থানায় ধর্ষণ মামলা করেছিলেন। অভিযোগ উঠেছে মামলা হওয়ার পরপরই নুরুল আমিন ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই তরুণী ও নুরুল আমিনের কাটানো ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ও স্থির চিত্র বিভিন্ন মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেয়। এতে সামাজিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ায় সোমবার সকালে রুপা আক্তার আত্মহত্যা করে।
রুপা আক্তারের আত্মহত্যার পর তার মা রিনা বেগম বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বন্দর থানায় মামলা করেছেন। গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে বন্দর থানায় সম্ভ্রমহানিকর কথা ও চাপ প্রয়োগ করে আত্মহত্যার প্ররোচণাসহ আপত্তিকর ভিডিও, ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে এনে মামলাটি করেন রিনা বেগম। মামলায় মো. নুরুল ইসলাম, মোসা. শিমলি, আব্দুল মমিন ওরফে কচি মেম্বার, ইব্রাহমী, পলাশ, ইসরাফিল, বাবুল, আরমান, দবিরসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসীন আরটিভি নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, তরুণীর আপত্তিকর ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগসহ আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি রেকর্ড করা হয়। এ ঘটনায় আব্দুল মমিন ওরফে কচি মেম্বার নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মামলায় বলা হয়, বন্দরের বালিয়াগাঁও এলাকার মৃত জমির খানের ছেলে নুরুল আমিনের (৪২) সঙ্গে মামলার অভিযোগকারী ২১ বছর বয়সী মেয়ের দুবছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সময়ের মধ্যে নুরুল আমিন ওই তরুণীকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখিয়ে তার বাসায় এনে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার অর্থাৎ গত ২ জুন ভুক্তভোগী তরুণীর মা বাদী হয়ে নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলা করেছিলন (মামলা নং-৫), যা পুলিশের তদন্তাধীন আছে।
