কটিয়াদী

কটিয়াদীতে মিথ্যা মামলায় জেল খাটছে হতদরিদ্র শ্রমিক

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে ঘটনাস্থলে না থেকেও মারামারি মামলা আসামী হয়ে জেল খাটছে হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের যুবক নাঈম মিয়া (১৮)। এর আগেও জেএসসি পরীক্ষারত অবস্থায় সংঘটিত একটি মারামারি মামলায় আসামী করা হয়েছিল তাকে। পরবর্তীতে বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সেই মামলা থেকে খালাস পায় আদালতের মাধ্যমে।

রবিবার ভোক্তভোগির পিতা ইসলাম উদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আমার ছেলে নাঈম মিয়া ০৩ এপ্রিল ২০২২ আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠায়। আমি তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।

জানা যায়, কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামে তোতা মিয়া ও ইসলাম উদ্দিনের মধ্যে জমি সংক্রান্ত জের ধরে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটি, বিবাদকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। সর্বশেষ গত ০৬-০২-২০২১ইং তারিখে উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। এই ঘটনায় তোতা মিয়ার ছেলে মো: সেলিম মিয়া বাদী হয়ে কটিয়াদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-১৫, তাং ১৪-০২-২০২১ইং। এতে ইসলাম উদ্দিনের পক্ষের ছয়জনকে আসামী করে মামলা করা হয়। উক্ত মামলায় ইসলাম উদ্দিনের ছেলে নাঈম মিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও মামলা আসামী হয়ে জেলে রয়েছে। নাঈম সদ্য বিবাহিত যুবক। বিয়ের ১৮ দিনের মাথায় মামলার আসামী হওয়াতে তার নববধু কান্না থামছেনা। কৃষক পরিবারের উপার্জনক্ষম ছেলে জেলে থাকায় অর্থনৈতিক সংকটে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। ছেলের শোকে বাবা অসুস্থ হয়ে সয্যাশয়ী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে তথ্য অনুসন্ধান করে জানা যায়, ঘটনার দিন শ্রমিক নাঈম মিয়া ছিলেন পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া উপজেলার বটতলা গ্রামে একটি বাড়িতে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নির্মান শ্রমিকের কাজ করছিল। কাজে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিল্ডিং নির্মান ঠিকাদার আ: আজিজ মিন্টুসহ কয়েকজন শ্রমিক।

এ বিষয়ে জানতে গিয়ে কথা হয় এলাকাবাসীর সাথে তাদের মধ্যে নুরুল ইসলাম, আবুল বাশার শুভ্র, মানিক মিয়াসহ বেশ কয়েকজন বলেন, তোতা মিয়া ও ইসলাম উদ্দিনের মধ্যে যে দিন ঝগড়া সেদিন শ্রমিক নাঈম মিয়াকে ঘটনাস্থলে আমরা দেখেনি। তার বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ আনা সম্পুর্ণ মিথ্যা। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

মামলা সুত্রে জানা যায়, বিবাদী ইসলাম উদ্দিন তাহার হাতে থাকা দা দিয়ে তোতা মিয়াকে আঘাত করে সাথে নাঈম মিয়া লোহার রড দিয়ে আঘাত করে।

এ বিষয়ে জানতে প্রশ্ন করা হলে তোতা মিয়া বলেন, বিবাদী ইসলাম উদ্দিন প্রথমে আমাকে আঘাত করে। নাঈম ঘটনাস্থলে ছিল কিনা আমি চোখে দেখিনি। অথচ মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে নাঈম মিয়া রড দিয়ে তোতা মিয়াকে আঘাত করে হাতে জখম করে।মামলার আরজি ও বর্তমান বক্তব্য মিল না থাকার বিষয়টি প্রশ্ন করা হলে তোতা মিয়া সদ উত্তর দিতে পারিনি।

মামলার বাদী মো: সেলিম মিয়ার সাথে কথা বলতে চাইলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তার নাম্বারে ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ফোন কেটে দেন। এ বিষয়ে বাদীর পিতা তোতা মিয়া গতকাল বলেন, ইসলাম উদ্দিনের লোকজন প্রায় সময় আমার সাথে ঝগড়া বাধায়। ঘটনার দিন নাঈম মিয়া ছিল কিনা আমি চোখে দেখেনি তবে হয়ত লুকিয়ে থাকতে পারে।

কটিয়াদী উপজেলা ইমারত নির্মান শ্রমিক সমিতির সভাপতি ওবায়দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ঘটনাস্থলে না থেকেও একজন নিরাপরাধ শ্রমিককে জেল খাটতে হচ্চে। আমরা তার অবিলম্বে মুক্তি চাই। মুক্তি না হলে শ্রমিকরা আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।

মসুয়া ইউপির ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার ইসমাঈল হোসেন জানান,ঘটনার দিন নাঈম মিয়া এলাকায় উপস্থিত ছিলনা বলে এলাকাবাসী আমাকে জানিয়েছিল।তার মুক্তির দাবি জানাচ্চি।

কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এসএম শাহাদাৎ হোসেন জানান,বিষয়টি খোজ নিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্চে।

Author

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পর্কিত সংবাদ

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker