কিশোরগঞ্জ

প্রচন্ড শীতেও থাকেন বিবস্ত্র দিলু পাগলা

মুর্শিদ আছে দেশে দেশে, এই জগতে কত বেশে, ধরতে পারলে পাবিরে তুই,বেহেশতেরি নাজরানা, পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না, পৃথিবীতে হাজার রকম পাগল আছে,কোন পাগলের কোন মোজেজা বুঝা বড় দায়!আসল পাগল আড়াল থাকে নকল পাগলের ভিড়ে।এ জন্যই লালন ফকির গানের অন্তরাটি হয়তো লিখেছিলেন।যাইহোক আসি মূল কথায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দিলু পাগলা (২৭)। এক পরিচিত নাম। সারাদিন তার বিচরণ কটিয়াদী বাজারের অলিগলি। প্রায় শত কেজির অধিক ওজনের বিশাল দেহের অধিকারী এই দিলু পাগল। বিবস্ত্র অবস্থায় থাকে ছোট থেকেই। ওজনের চাপে হাটতে কষ্ট হয়।

পৌর এলাকার সিরাজ মিয়ার দুই ছেলে এক মেয়ে। তার মধ্যে দুই ছেলেই ছোট থেকে পাগল৷ ছোট থেকেই কোন জামাকাপড় তারা পরেনা। ছোট ছেলের নাম ইলু এবং বড় ছেলের নাম দিলু। দুজনেই বিবস্ত্র অবস্থায় চলাফেরা করে। ছোট ছেলে ইলু কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এখন বড় ছেলে দিলু শুধু বেঁচে আছে ৷

একটি গানে গীতিকার বলছিলেন পাগলদের বাস্তবতা সম্পর্কে –
“চালচুলো নেই তার
নেই তার চেনা বা অচেনা,
আদমসুমারী হলে
তার মাথা কেউ গুনবেনা।
তার ভোট চাইবেনা
গণতান্ত্রিক কোন প্রার্থী,
সরকারে দরকার নেই
তাই নিজের সুড়ঙ্গে,
পাগল পাগল
সাপলুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে।”

সমাজ সংসারে বিভিন্ন রকম পাগল হয়। যেমন- কবি পাগল, ছবি পাগল, বিয়ে পাগল, প্রেমের পাগল, খাওয়ার পাগল, বেড়ানোর পাগল, ক্ষমতার পাগল, নেতা পাগল ও আধ্যাতিক পাগল বা কামিল পাগল ইত্যাদি।

মানসিক আবহাওয়া ভেদে পাগলরা নানা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকে। যেমন- কবি পাগলরা শুধু কারণে অকারণে কবিতা লিখে থাকে। কে বলে পাগল, আমি বলি ছাগল, এই জাতীয়। ছবি পাগলরা সারাক্ষণ মুখ বাঁকিয়ে ছবি তোলে। এটাকে আধুনিক ভাষায় বলা হয় সেলফি। বিয়ে পাগলরা দেশের সব জেলায় বিয়ে করতে পছন্দ করে। প্রেম পাগলরা দু’দিন পরপর প্রেমিক বা প্রেমিকা বদলায়। খাওয়ার পাগলরা হোটেল রেস্তোরাঁসহ বাসায় বসে বিভিন্ন খাবারের অর্ডার করে। ক্ষমতার পাগলরা পদ পেতে ঘনঘন দল বদলায়, নেতা পাগলরা যেখানে সেখানে জনসমাবেশ করে।

আধ্যাতিক পাগলরা স্রষ্টার সন্ধানে জীবন- মন উজার করে দেয়,কখনো কখনো হয়ে যায় দেশান্তরি।

উপজেলার চাতল বাগহাটা গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন,দিলু পাগল প্রায় সময় চোখে পড়ে পৌর এলাকায়।শুধু দিলু পাগলা নয় কোন পাগলের সাথেই অশোভন আচরণ কাম্য নয়। কারণ কোন পাগলের ভেতর কি ক্ষমতা আল্লাহ দিছে বলা বাহুল্য। তাছাড়া অনেক মানুষ আছে রাস্তা-ঘাটে পাগল দেখলে অবহেলা অবজ্ঞা করে তা মোটেই সমীচীন নয় কারণ পাগলরাও মানুষ।

জানা যায়, কুকুরের সাথে পরম বন্ধুত্ব দিলু পাগলার। গলায় গলায় ভাব। তাকে দেখলে কোন কুকুর না তাকিয়ে বা না থেমে যায় না। লেজ গুটিয়ে তার আশপাশে ঘুর ঘুর করে৷ কুকুরকে হাতে নিয়ে লেজ ধরে ঘুরানো এবং মুখের ভিতর হাত ডুকিয়ে দেওয়া সহ নানা কিছু করে থাকে৷ কখনো কুকুরের কামড়ে রক্ত ঝড়লেও দিলু পাগলার কিছুই হয়না৷ বরং কখনো তার কামড়ে কুকুর উল্টো আহত হয়। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলে আসছে। এ এক আশ্চর্য বিষয় সবার মধ্যে৷ তার কুকুর খেলা দেখতে ভীড় জমে।

এখন তীব্র শীত। কিন্তু খালি গায়ে দিব্যি ঘুরছে সকাল আর গভীর রাত৷ কুয়াশা শীত তার উপর দিয়ে যায় তবুও কিছুই হয়না৷ সে খালি গায়ে হাটে। কত বৃষ্টি তার শরীলের উপর দিয়ে যায় কোন ঠান্ডা লাগেনা তার। এই শীতেও তার কোন অসুস্থতা নাই৷ নাই কোন সর্দি জ্বর। সবকিছু তার কাছে পরাজিত। আল্লাহর আশ্চর্য এক কেরামতি। অবশ্য সে দারুণ ভাবে চা পান করতে পারে। চা খেয়ে চায়ের কাপ দূরে চলে গেলেও সে আবার দিয়ে যায় এটা আরেক কৃতিত্ব তার৷ মাঝে মধ্যে ওর পছন্দ হলে নিজ হাতে কিছু নিয়ে যায়। এছাড়া অন্য কোন ক্ষতি করেনা তেমন। দূরে কোথাও চলে গেলে স্থানীয় পরিচিত সব চালক গাড়িতে করে তাকে নিয়ে আসে৷ যেহেতু সবাই তাকে চিনে। ভাবলেশহীন ঘুরে সারাদিন। তেমন কোন কথাই বলেনা। শুধু দুয়েকটা কথা মাঝে মধ্যে বলে। হঠাৎ মহিলারা দেখে ভয় পেয়ে যায়। যদিও সে কিছুই করেনা।

সম্পর্কিত সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker