চট্টগ্রামচট্টগ্রামসারাদেশ

তাবিজ কাজ করেনি, ক্ষোভে নারী বৈদ্যকে হত্যা করল ব্যর্থ প্রেমিক

তাবিজ কাজ করেনি, এই ক্ষোভে নারী বৈদ্যকে হত্যা করল ব্যর্থ প্রেমিক। এই লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার সকাল ৭টায় বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের টাইমবাজার সংলগ্ন গন্ডামারা সড়কের দাশপাড়ায়।

প্রেমে ব্যর্থ এহসান ‘দা’ দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করে বৈদ্য ফাতেমা বেগম গীতাকে (৪২)। ওই সময় ফাতেমাকে বাঁচাতে গিয়ে এহসানের কোপে গুরুতর আহত হন বৈদ্যের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পাখি (২০), তাদের গৃহপরিচারিকা রাবেয়া বেগম (৩৫), গৃহপরিচারিকার কন্যা বৃষ্টিসহ (১০) তিনজন। ওই তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

উত্তেজিত জনতা মো. এহসানকে (২২) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এহসান শীলকূপের মাইজ পাড়ার মো. ইব্রাহীম প্রকাশ বদর আমিনের ছেলে। নিহত ফাতেমা বেগম গীতা মধ্যম শীলকূপের মোস্তাক আহমদ শিকদারের স্ত্রী। নিহত ফাতেমা বৈদ্য বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া গ্রামের মৃত মনিন্দ্র দাশের কন্যা গীতা দাশ।

শীলকূপের মোস্তাক আহমদ শিকদারকে প্রেম করে বিয়ে করার আগে তিনি গীতা বৈদ্য নামে পরিচিত ছিলেন। বিয়ের পর ধর্ম পরিবর্তন করে নাম ফাতেমা বেগম রাখলেও স্থানীয়ভাবে তাকে গীতা বৈদ্য নামে চেনেন। ঘটনার পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মো. জাহাঙ্গীর, সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) হুমায়ুন কবির, বাঁশখালী থানার ওসি সফীউল কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

প্রত্যেক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৭টা বাড়ির সবাই ঘুমে। মো. এহসান টাইম বাজারসংলগ্ন গন্ডামারা সড়কের দাশপাড়ায় এসে বন্ধ ঘরের দরজা খুলতে অনুরোধ করলেন। ওই সময় বৈদ্যের ছোট ছেলে মো. বাদশা সিকদার (১৬) দরজা খুলে দিয়ে পাশের বাজারে নাস্তা করতে চলে যায়। ঘরে কোনো পুরুষ সদস্য ছিল না। ওই সময় এহসানের হাতে ছিল একটি ডাব।

এহসান ‘আপা’ ডেকে ফাতেমা বেগমকে ঘুম থেকে ওঠান। তিনি ঘুম থেকে উঠে মন্ত্র পড়ে ডাবে ফুঁ দিয়ে এহসানকে দেন। ডাব কাটার জন্য এহসান একটি দা দিতে বলেন। দা দিয়ে ডাব কেটে পানি খেয়ে এহসান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফাতেমাকে বলেন, ‘আগের তাবিজগুলো দিয়ে কিছুই হয়নি। আমি যেই মেয়েটিকে ভালোবাসি সে আমার সঙ্গে কথাও বলে না। বরং আমি উদ্ভট স্বপ্ন দেখছি।’ জবাবে ফাতেমা বললেন, ‘আরো অনেকদিন তাবিজ ও ডাব পড়া নিতে হবে, তাহলে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

এহসান সঙ্গে সঙ্গে ফাতেমাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। ঘরে থাকা বৈদ্যের বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পাখি (২০), তাদের গৃহপরিচারিকা রাবেয়া বেগম (৩৫), গৃহপরিচারিকার কন্যা বৃষ্টি (১০) ফাতেমাকে বাঁচাতে আসলে ধারালো দায়ের কোপে তারাও আহত হয়। তাদের চিৎকারে টাইমবাজারের শতাধিক লোক এগিয়ে এসে মো. এহসানকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গুরুতর আহত চারজনকে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান গ্রামবাসী। ওইখান থেকে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। চমেকে নিয়ে যাবার পথে ফাতেমা মারা যান। অন্যরা চমেকে চিকিৎসাধীন।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফীউল কবির বলেন, খুনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফাতেমার সঙ্গে তাবিজ ও ডাব পড়া নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে এহসান ঘরে থাকা দিয়ে তাকেসহ অন্যদের কোপায়। ওই ঘটনায় ফাতেমা মারা গেলেও অন্যরা চিকিৎসাধীন। এহসানকে দাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে।


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker