এ যেন এক লিচুর দেশ, যেদিকে চোখ যায় শুধু থোকায় থোকায় লিচু যেমন রঙ তেমন গুণেমানে সেরা।কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়া। প্রায় দুইশ বছর আগে সুদূর চীন থেকে কোনো এক ব্যক্তি প্রথমে একটি চারা গাছ এনে লাগায় মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে। অধিক ফলন ও রসে টসটসে ছোট বিচির কারণে এ লিচু এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিছু দিনের মধ্যেই এ জাতের লিচুর কলম চারা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। অধিক ফলন ও লাভজনক দাম পাওয়ায় দ্রুতই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠে গ্রামবাসী। বর্তমানে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে শোভা পাচ্ছে এ লিচুর গাছ। এ গ্রামের নামেই লিচুর নাম রাখা হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’। আশপাশের গ্রামের মানুষও লিচু চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, নারান্দী ও হোসেন্দীর একাংশে বহু বছর ধরে লিচুর আবাদ হয়ে আসছে। এরমধ্যে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু দেশজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। এই চার গ্রামের শত শত চাষি লিচুর চাষের সঙ্গে জড়িত। প্রত্যেকটি গ্রামেই অনেক পুরাতন লিচুর গাছ রয়েছে। কম খরচে যেহেতু বেশি টাকা আসে তাই এখানকার অনেকেরই মূল পেশা লিচু চাষ। চারটি গ্রামে কমপক্ষে ৭-৮ হাজার লিচুর গাছ রয়েছে। এ বছর কমপক্ষে ৮-১০ কোটি টাকার লিচু বেচার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রসে টুইটম্বুর, ঘ্রাণ আর নজরকাড়া রঙের জন্য প্রসিদ্ধ এখানকার লিচু। অতুলনীয় এ লিচু দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। প্রায় দুইশ বছরের প্রসিদ্ধ এ লিচুর এখন ভরা মৌসুম শুরু হয়েছে। লিচুর মৌসুমকে ঘিরে গ্রামগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ।দূর-দূরান্তের মানুষ আসছেন লিচু কিনতে। এলাকার আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসছেন লিচুর মৌসুমে। এখান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
লিচু কিনতে ময়মনসিংহ থেকে আসা দেলোয়ার বলেন, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু দেখে এখানে এসেছি। ছুটির দিন তাই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ছুটে এসেছি। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু দেখতে অনেক সুন্দর, খেতেও খুব সুস্বাদু।
প্রতিবেশি উপজেলা হোসেনপুর থেকে আসা সাদেক হোসেন বলেন, প্রতি বছরই আমরা এখানে লিচু কিনতে আসি, এবার বন্ধুরা অনেকে একসাথে এসেছি। এখানকার লিচুর স্বাদই আলাদা। নিজ হাতে পেরে লিচু খেয়েছি। বাড়ির জন্যও কিছু নিয়ে যাচ্ছি।
স্থানীয়রা জানান, বংশপরম্পরায় মঙ্গলবাড়িয়া, কুমারপুর, নারান্দী হোসেন্দী গ্রামের অনেকেই লিচুর আবাদে জড়িত। লিচুর আয় থেকেই চলে অনেক পরিবারের ভরণ-পোষণ আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। মৌসুমের শুরুতে মুকুল আসার পরই চাষিদের কাছ থেকে কিছু গাছ কিনে নেন স্থানীয় ব্যাপারীরা। এরপর পরিচর্যা করে গাছের পাকা লিচু বিক্রি করেন তারা।
লিচু চাষি কবীর জানান, কীভাবে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে এ ব্যাপারে কৃষি অফিসের মাধ্যমে সবাইকে সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হয়।এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুর-ই আলম বলেন, “পাকুন্দিয়া উপজেলার চারটি গ্রামে বহু বছর ধরে লিচুর আবাদ হয়ে আসছে। ওই চারটি গ্রামে প্রায় ৭-৮ হাজার লিচু গাছ রয়েছে। প্রত্যেকটি গ্রামেই অনেক পুরাতন লিচু গাছ রয়েছে। এসব গ্রামের মধ্যে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু দেশজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। চারটি গ্রাম থেকে এ বছর ৮-১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।